কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর ১৪৫ টি ক্রসফায়ারে অন্তত ২০৪ জন মানুষের হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার পরও নিজেকে নিরপরাধ দাবী করেছেন প্রদীপ কুমার দাশ। আজ দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় হাজিরা দিতে কাশিমপুর কারাগার থেকে চট্টগ্রামে আসার পর প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় ফাঁক পেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। কোনো অপরাধ না করেই শাস্তি পেয়েছি। আপনার জন্য, দেশের জন্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যারের জন্য।’
ক্রসফায়ারের প্রতিটি ঘটনাতেই নিহতদের মাদক কারবারি অথবা অবৈধ অস্ত্র বহনকারী হিসেবে দাবি করেছেন ওসি প্রদীপ। তবে এলাকার সাধারণ মানুষের দাবি, নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন নিরীহ। দাবি করা টাকা না পেলেই ক্রসফায়ারে দিতেন প্রদীপ। দুই বছরে এভাবে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগও আছে প্রদীপের বিরুদ্ধে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি ও নির্যাতনের পাশাপাশি প্রদীপের বিরুদ্ধে রয়েছে থানায় আটকে রেখে নারী ধর্ষণের অভিযোগও।
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলাটি করেন। এতে একে অপরের সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
২০২১ সালের ২৮ জুলাই এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ওই মামলা বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারের জন্য বদলি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ-চুমকির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ছিল এই মামলায় প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন। কিন্তু অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে উচ্চ আদালতে করা আবেদনের ওপর আদেশ দাখিল বিষয়ে সময়ের আবেদন মঞ্জুর করায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে গেল।
তবে দুদকের পিপি মাহমুদুল হক বলেছেন, আসামির আবেদনে আদালত দুই দফায় সময় দিয়েছেন। আগামী শুনানিতে হাইকোর্টের কোনো আদেশ দাখিল করতে না পারলে আসামি প্রদীপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে যাবে। এ মামলায় প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে বলে আদেশ দেন আদালত।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত অফিসার মেজর সিনহা হত্যাকান্ডে ফাঁসির দন্ডাদেশ পেয়েছেন এই বিতর্কিত পুলিশ অফিসার।