জাতীয়
Hits: 748
শহীদ নূর হোসেন ও গণতন্ত্র নিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গার সাম্প্রতিক বক্তব্যে রাজনীতি অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার তৈরি হয়েছে। রাঙ্গার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তাকে সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান সরকারি দলের সদস্যরা। তবে বিরোধীদলীয় সদস্যরা রাঙ্গার বক্তব্যকে তার নিজস্ব মতামত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, রাঙ্গার বক্তব্যের দায় নেবে না জাতীয় পার্টি। তবে এজন্য পার্টি লজ্জিত।স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ’ইয়াবাখোর’ বলায় জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার সমালোচনা করেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা মশিউর রহমান রাঙ্গাকে সংসদে এসে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান এবং জাতীয় পার্টির অবস্থান জানতে চান।
আরো পড়ুন
Error: No articles to display
এরপর সংসদে ফ্লোর নিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্যের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা সম্পর্কে বক্তব্য হয়েছে। তার বক্তব্য আমি শুনেছি, আমি সেদিন সভায় ছিলাম না। পরে এটা ভাইরাল হয়ে গেছে। এই বক্তব্য জাতীয় পার্টির বক্তব্য না। এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। এটা রাঙ্গার নিজস্ব বক্তব্য হতে পারে। এই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত। আমরা দুঃখিত এবং অপমানিত অনুভব করছি।
তিনি বলেন, নূর হোসেন ৯০-তে তার জীবন দিয়ে গেছেন। যে যুবক গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে পারেন, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারেন সেই সাহসী যুবকের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। আমরা কখনো এই ধরনের ধৃষ্টতা দেখাই নাই। এই ধরনের অপমানজনক কথা কখনো বলি নাই। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার বক্তব্য হতে পারে না।"
ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, একটি কথা আছে বান্দরকে লাই দিলে গাছের মাথায় ওঠে। এই লাই আমরা দেই নাই। এই লাই এই সংসদই দিয়েছে। যাদের অতীত নাই, বর্তমানে কিছুই ছিল না। হঠাৎ তাকে মন্ত্রী বানানো হলো, একটার পর একটা প্রমোশন দেওয়া হলো। আমরা তো তাজ্জব হয়ে গেলাম! এগুলো আমরা দেইনি। এই সংসদে সে চিফ হুইপ। আমি একদিন বললাম তাজুল ইসলাম চৌধুরী মারা গেছেন, তার বিষয়ে বক্তব্য রাখব। সে বলে—আপনি দেবেন, আমি কেন নাম পাঠাব। এই ধৃষ্টতা সে দেখাতে পারে!
তিনি বলেন, আমি যতদিন রাজনীতি করি ততদিন ওর বয়সও না। সে করেছে যুবদল। কোথায় আন্দোলন করেছে? কোথায় সংগ্রাম করেছে? …শুধু তাই না প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কেও সে কথা বলেছে। সে গণতন্ত্রের ছবক দেয়। যে লেখাপড়া করে নাই, রাতারাতি কাগজের মালা গলায় দিয়ে পরিবহনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে হঠাৎ করে এখানে এসে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে গেছে। সে এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখায়। আর তার জবাব দিতে আজ সংসদে দাঁড়াতে হয়। আজকে খুব লজ্জিত। এটা সম্পূর্ণ আমাদের ঘাঁড়ে এসে পড়েছে। আমরা দুঃখিত। নূর হোসেনের গায়ে লেখাটা ছিল একটা পোস্টার। সারা বিশ্বের লোক দেখেছে। এটা ছিল তার মনের কথা।
মঙ্গলবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, নজিবুল বশর মাইজ ভাণ্ডারী, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, মুজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ।
এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং বিরোধী দলের উপনেতা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙ্গার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার বিষয়টি সংসদে তুলেন আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। এ সময় রাঙ্গা অনুপস্থিত ছিলেন অধিবেশনে।
আমির হোসেন আমু বলেন, রাঙ্গার এ বক্তব্য দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। এরশাদ সাহেবের কুকীর্তি ঢাকার জন্য একথা বলেছেন। এখন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হোক। তাকেও ক্ষমা চাইতে হবে। রাঙ্গা অর্বাচীন চিফ হুইপ। নিঃশর্তভাবে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাঙ্গার বক্তব্য বাংলার মানুষের হৃদয়ে ব্যথা দিয়েছে। তিনি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের ঘৃণা প্রকাশ করছি। তার বক্তব্য জাতি ঘৃণা করেছে। রাঙ্গা খারাপ বক্তব্য দিয়েছেন। এটা কুৎসিত বক্তৃতা। একজন সুস্থ মানুষ হলে, স্বাভাবিক থাকলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে এমন সমালোচনা করতো না। আজ রাঙ্গার বক্তব্যে সারাদেশে বিক্ষোভ চলছে। তার জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, রোববার জাপার এক আলোচনা সভায় শহীদ নূর হোসেনকে ’নেশাগ্রস্ত’ বলে মন্তব্য করেন মসিউর রহমান।
তিনি বলেন, ’নূর হোসেন একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিল। তাঁকে নিয়ে গণতান্ত্রিক দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নাচানাচি করছে।’
পরে নূর হোসেনকে নিয়ে করা অবমাননাকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। মসিউর রহমানের পক্ষে জাপার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।