ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী। তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির \’আইন বিষয়ক সম্পাদক\’ হিসেবে ২০১০ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।কিন্তু আজ শৃঙ্খলা, পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরপাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে তুরিন আফরোজকে প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
সোমবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপত থেকে এই তথ্য জানা গেছে। আজ সোমবার (১১ নভেম্বর)থেকেই এই আদেশ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন

Error: No articles to display

এস এম নাহিদা নাজমীন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বেগম তুরিন আফরোজকে শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের দায়ে এ বিভাগের গত ২০/২/২০১৩ ইং তারিখের নং-সলিঃ/জিপি-পিপি/আঃট্রাঃ-০২/২০১০-৩৫ প্রজ্ঞাপনে প্রদত্ত নিয়োগ বাতিলক্রমে প্রসিকিউটরের পদ থেকে অপসারণ করা হলো। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।আজ থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
এর আগে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখা থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এরপর তাকে মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের তিন বছরের মাথায় প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তুরিন আফরোজ। জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মামলা পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন তিনি।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত বছরের ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে তুরিন আফরোজ গোপনে বৈঠক ও টেলিফোনে আলাপ করেছেন বলে অভিযোগ প্রসিকিউশনের। এখন কারাবন্দি ওয়াহিদুল হক জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থারও (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার ওয়াহিদুল হকের মোবাইল ফোনে থাকা দুই অডিও রেকর্ডের কারণে ফেঁসে যান তুরিন আফরোজ।
রাজধানীর গুলশান থেকে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করে গুলশান পুলিশ।
ওই সময় তার মোবাইল ফোনটিও জব্দ করে পুলিশ। পরে সেটি পরীক্ষা করতে গিয়ে দুটি অডিও রেকর্ড পাওয়া যায়। ওই অডিওতে তার সঙ্গে তুরিনের যোগাযোগের তথ্য ছিল।
গুলাশান থানার ওসি অডিও রেকর্ড দুটি কপি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেন। পরে সংস্থা তা ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরকে দিলে তুরিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়।
দুটি অডিওর মধ্যে একটি টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড। এটি চার মিনিটের মতো। অন্য অডিওটি ওই গোপন বৈঠকের, প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার মতো।
জানা গেছে, তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগে তদন্ত হচ্ছিল। তা হল- আসামি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠক, মামলার নথি তার কাছে হস্তান্তর ও মামলার মেরিট নিয়ে কথা বলা।
অভিযোগের প্রমাণ ও অডিও রেকর্ড আইন মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তুরিন আফরোজকে ট্রাইব্যুনালের সব মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আসামি ওয়াহিদুল হকের মামলার প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান। গত বছর তদন্ত শুরু হওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর তুরিন আফরোজকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়।
অভিযোগ উঠে, ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতারের আগে গত নভেম্বরে তুরিন আফরোজ প্রথমে তাকে টেলিফোন করে দেখা করার সময় চান। এর পর একটি হোটেলে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেন তিনি।
তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, তাদের টেলিফোনে কথা হয় গত বছরের ১৮ নভেম্বর। আর পর দিন ঢাকার অলিভ গার্ডেন নামে একটি রেস্তোরাঁর গোপন কক্ষে বৈঠকটি হয়। সেখানে তুরিন আফরোজ, তার সহকারী ফারাবি, আসামি ওয়াহিদুল হকসহ মোট পাঁচজন ছিলেন।
তিনি জানান, টেলিফোন রেকর্ডে তুরিন আফরোজ জানিয়েছেন যে তিনি বোরকা পরে ওই হোটেলে যাবেন। তার সঙ্গে থাকবে সহকারী ফারাবি, যাকে তিনি নিজের স্বামী পরিচয়ে সেখানে নিয়ে যাবেন।
এর আগে পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২০১৪ সালের আগস্টে প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকেও মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য,তুরিন আফরোজের বাবা তসলিমউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সরকারের কর বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত উর্ধতন কর্মকর্তা এবং মা সামসুন্নাহার তসলিম একজন গৃহিণী। নিজের বাড়িতে ঢুকতে না পেরে আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন মা ও ভাই। মা শামসুন নাহার তসনিম ও ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশিরকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ায় (১৪ জুন) তুরিনের বিরুদ্ধে এ জিডি করা হয়।
এর আগেও ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে থানায় জিডি (জিডি নম্বর- ১১৮৮) করেছিলেন তার মা। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে বাড়ি দখলের অভিযোগে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ২ মার্চ পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে মা শামসুন নাহার এবং অন্য ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করে দেন তুরিন আফরোজ। নিজেকে বাড়ির মালিক দাবি করে তুরিন বাড়ি ও জমির দলিলপত্রও দখলে নেন।

News Page Below Ad

আরো পড়ুন

Error: No articles to display