নূর হোসেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর দেশের দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একত্র হয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করে। এর পূর্বে এরশাদ ১৯৮২ সালে একটি সেনা উত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন, কিন্তু বিরোধী দলগুলো তার এই নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে অভিযুক্ত করে। তাদের একমাত্র দাবী ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা।স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলখোর বললেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। পুলিশের গুলিতে নূর হোসেনের নিহত হওয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এরশাদের দলের এই নেতা।
নূর হোসেন দিবসের দিন রবিবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে রাঙ্গা বলেন, পুলিশ গুলি করলো সামনে থেকে আর ঘুরে গিয়ে পেছন থেকে লাগল। কি হাস্যকর যুক্তি।

আরো পড়ুন

Error: No articles to display

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে-পিঠে ’স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’— স্লোগান ধারণ করে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন নূর হোসেন।
মিছিলটি গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে পৌঁছানোর পর এর অগ্রভাগে থাকা নূর হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। তার তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ, বেগবান হয় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। ওই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন ঘটে।
নূর হোসেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাঙ্গা বলেন, ইয়াবাখোর ফেনসিডিলখোর ছিলেন নূর হোসেন। তাকে নিয়ে নাচানাচি করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের কাছে ইয়াবা-ফেন্সিডিলখোর ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বেশি। কিন্তু এরশাদ সাহেবের কাছে এরা কোনো গুরুত্ব পাননি। যারা গণতন্ত্রের গ-ও বুঝে না।
অ্যাডিক্টেড একটি ছেলে নুর হোসেন। পুলিশ গুলি করলো সামনে থেকে আর ঘুরে গিয়ে পেছন থেকে লাগল। কি হাস্যকর যুক্তি। তখনতো একজন মারা গেছে, এখন প্রতিদিনই মানুষ মরছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালন করে থাকলেও জাপা পালন করে থাকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে।
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ’গণতন্ত্র আজ নির্বাসনে সুন্দরবনে। যদি বিশ্বজিৎ ও আবরারকে হত্যা করা না হতো তাহলে বলতাম গণতন্ত্র রয়েছে। শিক্ষককে পানিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। জাবি ভিসির পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করছে ছাত্ররা।
ঢাকার বনানীতে জাপা কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদ নয় বরং খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এমন দাবিও করেন জাপা মহাসচিব।
এরপর তিনি যোগ করেন, খালেদা স্বৈরাচার হলে শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার। একুশ বছর পর এরশাদের অনুগ্রহে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর সেই আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগ বিএনপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ওদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। এই গণতন্ত্র মুখে দেয় নাকি মাথায় দেয়।
অনুষ্ঠানে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন,নূর হোসেনের মৃত্যুর বিচার আমরা চাই। সুষ্ঠু তদন্ত চাই। মিলন হত্যার বিচার চাই, সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যাতে মানুষ সঠিক ঘটনা জানতে পারে। এই নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
এরশাদ সাহেব ১৯৮৬ সালের এই দিনে ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশে আর কোনো দিন সামরিক শাসন আসবে না। আর কিন্তু কখনই কাঠামোগতভাবে সামরিক শাসন আসেনি।
যেদিন সঠিকভাবে ইতিহাস রচিত হবে, সেদিন দেশের মানুষ এই দিনটিকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করবে বলেও মন্তব্য করেন এরশাদের ভাই কাদের।
তিনি বলেন, এরশাদের জীবন ব্যবস্থা ছিল গণতন্ত্রের জন্য উৎসর্গ। উনি গণতন্ত্রের স্বার্থে বাধ্য হয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। আবার যখন প্রয়োজন হয়েছে গণতন্ত্রের স্বার্থে উনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর জাপার সভাপতি প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান, অ্যাড. শেখ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভরায়, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান প্রমুখ। বক্তব্য রাখেন।
এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, নূর হোসেন ও ডাক্তার মিলন হত্যার ইস্যু তুলে দেশের মানুষকে বারবার বিভ্রান্ত করা হয়। আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অপবাদ দেয়া হয়। এর একটা সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে।
নুর হোসেন ও ডাক্তার মিলন হত্যার ইস্যু তুলে দেশের মানুষকে বারবার বিভ্রান্ত করা হয়। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অপবাদ দেওয়া হয়। এর একটা সমাধান জরুরি। জাতীয় পার্টি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে নুর হোসেন ও ডাক্তার মিলনসহ ষড়যন্ত্রমূলক সকল হত্যার বিচার করা হবে।
তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর সামরিক শাসন তুলে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার পর থেকেই কাঠামোগত গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। তবে, গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যহত হয়েছে বারবার।
তিনি আরও বলেন, এখন প্রতিদিনই দুর্নীতি, গুম, খুন ও সন্ত্রাস অব্যাহত ভাবেই বেড়ে চলেছে। গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে দুষ্টে দমন আর শিষ্টের লালন। কিন্তু এখন উল্টে গেছে সবকিছু, এখন চলছে দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন। গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা থাকলে দেশে ৫ কোটির বেশি বেকার থাকতে পারে না।
পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সারাজীবন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে কাজ করেছেন। গণতন্ত্রের পথে অবিচল ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ- বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, ’তথাকথিত নূর হোসেন একজন অল্পশিক্ষিত, মূর্খ ও দরিদ্র টাইপের লোক। আর্টিস্ট দিয়ে তার বুকে-পিঠে শ্লোগান লিখে, সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে আসা হয়। আমাদের পূজোর সময় পাঁঠাকে গোসল করিয়ে, তেল-সিঁদুর মেখে, ঠাকুরের সামনে এনে বলি দেয়, ঠিক তেমনি। প্রাণ যায় পাঁঠার, পূণ্য হয় আমার। তেমনি নূর হোসেনকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিলো। আর ফল ভোগ করে অন্যরা। নূর হোসেন গণতন্ত্রের জন্য আত্মহুতি দেননি। তাকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো।

News Page Below Ad

আরো পড়ুন

Error: No articles to display