বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। মঙ্গলবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানান মোরশেদ খান।পদত্যাগপত্রে মোর্শেদ খান ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেছেন। তবে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তার মধ্যে ক্ষোভ ছিল।মোরশেদ খানের পদত্যাগপত্রে সেদিকে কিছুটা ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে।তবে মোরশেদ খানের পদত্যাগের বিষয়ে কিছুই জানেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার বিষয়ে মোরশেদ খান বুধবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে লেখা পদত্যাগপত্র আমার ব্যক্তিগত সহকারীর (পিএস) মাধ্যমে মঙ্গলবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পাঠিয়েছি।

আরো পড়ুন

Error: No articles to display

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, আমি বিভিন্ন মাধ্যমে মোরশেদ খানের পদত্যাগের বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র আমি এখনও পাইনি।
মোরশেদ খানের পদত্যাগপত্র এখনও পাননি বলে জানিয়েছেন বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বুধবার দুপুরে বলেন, পদত্যাগপত্রটি এখনও পাইনি।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মোরশেদ খান। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপি ও চট্টগ্রাম বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিগত কারণ নয়, মূলত ক্ষোভ-অভিমান থেকেই দল ছেড়েছেন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দল করে আসা এই নেতা।
পদত্যাগপত্রে মোরশেদ খান লেখেন- ’মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময় কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমার বিবেচনায় সেই ক্ষণটি বর্তমানে উপস্থিত এবং উপযুক্তও বটে। তাই অনেকটা দুঃখ ও বেদনাক্লান্ত হৃদয়ে পদত্যাগের এ চিঠি।’
মোরশেদ খান আরও লেখেন,রাজনীতির অঙ্গনে আমার পদচারণা দীর্ঘকালের। কিন্তু দেশের রাজনীতি এবং দলের অগ্রগতিতে নতুন কিছু সংযোজন করার মতো সঙ্গতি নেই। তাই ব্যক্তিগত কারণহেতু আমার উপলব্ধি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার এখনই সময়। বহুবিধ বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আমি অবিলম্বে আজ (মঙ্গলবার) বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ অবস্থায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহারসহ বর্তমানে অলঙ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকেও পদত্যাগ করছি।
বিএনপি সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন মোরশেদ খান। সেখানে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এর বাইরে চট্টগ্রামে দলের রাজনীতিতে তার অনুসারীদের বিভিন্ন পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় কমিটিগুলোতে সুফিয়ানের অনুসারীদের গুরুত্ব দেয়া হয়। সবশেষ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয় সুফিয়ানকে। এসব নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মোরশেদ খানের দূরত্ব তৈরি হয়।
এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। দলের হাইকমান্ডকে জানানোর পরও কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগের পথ বেছে নিতে বাধ্য হন।
পদত্যাগের প্রকৃত কারণ জানিয়েছেন মঞ্জুর মোরশেদ খান। তিনি বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ’ব্যক্তিগত কারণে আমি পদত্যাগ করেছি। অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করে করে আমার উপলব্ধি হয়েছে- এই দলে আমার আর কনট্রিবিউশন (অবদান) রাখার কিছু নেই। সেজন্য পদত্যাগ করেছি।’
দলের রাজনীতির সমালোচনা করে মোরশেদ খান বলেন, বিএনপির রাজনীতি এখন আর রাজনীতি নেই। এরা স্কাইপের মাধ্যমে রাজনীতি করতে চায়। এটি করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান বলেন, শুধু বিএনপি নয়, আমি আর কোনো রাজনেতিক দলের সঙ্গেই থাকব না। সব ধরনের রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পদত্যাগপত্র কার কাছে জমা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে লেখা পদত্যাগপত্র আমার ব্যক্তিগত সহকারীর (পিএস) মাধ্যমে মঙ্গলবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পাঠিয়েছি।
১/১১’র সরকারের পরে দলীয় রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন জোট সরকারের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০১৬ সালের কাউন্সিলে তাকে দলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ দেয়া হয়েছিল। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সমর্থন আছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য,১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এর পর চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাল, এর পর জুন ’৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ দূত ছিলেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ স্পেশাল কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যানও ছিলেন। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
বিএনপি আমলে একচেটিয়া ব্যবসায়িক সুবিধা পাওয়া ’সিটিসেল’ সিডিএমএ মোবাইল অপারেটরের মালিক ছিলেন এম মোর্শেদ খান। সিটিসেল ছিল বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর। ১৯৮৯ সালে এটি বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। বকেয়া কর পরিশোধে ব্যর্থতায় ২০১৬ সালের নভেম্বরে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

News Page Below Ad

আরো পড়ুন

Error: No articles to display