মুক্তমত
Hits: 787
বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই একটি ঘটনা বার বার করে ঘটে থাকে। আর তা হলো মেয়ে বা নারী ঘটিত ঘটনা। প্রতিনিয়তই দেশে এই ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যার কারনে অনেকেই এ নিয়ে তুলে থাকেন তাদের নিজস্ব মতামত। তেমনি নারী স্বাধীনতা নিয়ে আবারো একটু নতুন লেখনি লিখলেন কলামিষ্ট ক্যামেলিয়া। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনি তুলে ধরা হলো হুবহু:-
আরো পড়ুন
Error: No articles to display
২০১৭ সালের ঘটনা। প্রতি গ্রীষ্মেই সারা সুইডেনে মিউজিক ফেস্ট হয়। সাড়া রাত চলে সেই সব ফেস্ট। সবাই সেখানে নাচানাচি করে, আড্ডা মারে ড্রিঙ্ক করে, সব মিলিয়ে ফেস্টটাকে ফেস্টের মতো পালন করে। তো সেবার ফেস্টের দিন আমার প্রচণ্ড মন খারাপ, খুব প্রিয় এক বন্ধুর ছোট ভাই মারা গেছে আগের রাতে। যেহেতু টিকেট কেটে ফেলেছি তাই একরকম জোর করেই বন্ধুরা ধরে নিয়ে গেলো। কিন্তু নাচানাচি ভালো লাগছিলো না বলে ওদের থেকে সরে গিয়ে মাঠের এক পাশে বসে বিয়ার খাচ্ছিলাম। কখন যে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছি নিজেও জানি না। টের পেলাম তখন, যখন পেছনে কেউ এসে বললো, তোমার কি মন খারাপ? তাকিয়ে দেখি, বিশ বাইশ বছরের একটা ছেলে খুব দুঃখী দুঃখী চোখে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, হ্যাঁ আমার মন খারাপ। ছেলেটা বললো, আমি তোমার পাশে বসি? বললাম, বস। তারপর সারা রাত আমি একটা অপরিচিত ছেলের সামনে কখনো কাঁদলাম, কখনো হাসলাম কখনো বা চুপচাপ গান শুনলাম। ছেলেটার মধ্যে আমাকে সিগারেট দিলো, ওয়াইন কিনে দিলো, আমি ওকে বিয়ার কিনে দিলাম। পুরোটা সময় আমরা গল্প করলাম, আমার বাসার গল্প, আমার ছোট বেলার আম চুরির গল্প, স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখার গল্প, আর, ও বললো, ওর স্নো স্কুটারের গল্প, ওর স্কুল পালানো গল্প। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড কীভাবে মারা গেলো গত বছর, সে গল্প বলে চুপচাপ মাটিতে তাকিয়ে ছিলো। আমি কথা ঘুরিয়ে কী একটা বলে খুব হেসেছিলাম দুজনে। এইটুকু ছলও, আমি, আমরা দুজনেই বুঝেছি, কিন্তু সেই মুহূর্তে সেটা কেউ প্রকাশ করিনি।
ধীরে ধীরে ভোর হয়ে গেলো, বিদায় বেলায় হাগ করে বাসায় ফিরে এলাম আর ও চলে গেলো ওর পথে। তারপর খেয়াল করলাম, আমি ওর নাম জানি না, আর ছেলেটাও আমার নাম জিজ্ঞেস করেনি। আমাদের নাম জানার কোনো দরকারও ছিলো না। এবার বলছি কেন শেয়ার কলাম এই ঘটনা। গত পাঁচ বছরে এমন অসংখ্য ছোট বড় অসাধারণ স্মৃতি আমার স্মৃতি ভাণ্ডারে জমেছে কিন্তু একটাও এমন স্মৃতি জমেনি যেখানে কেউ আমাকে বলেছে, কেন মেয়ে হয়ে মদ খেলা? কেন মেয়ে মানুষের হাতে সিগারেট? কেন মেয়ে হয়ে রাত বিরাতে বাইরে গেছ? বরং এটা শুনেছি, তোমার কি মন খারাপ? সবাই উৎসবে বিজি তুমি একা কেন? কিংবা খুব ভদ্র ভাষায় কেউ বলেছে, আমি কি তোমাকে একটা ড্রিঙ্ক অফার করতে পারি? সুইডেন মানেই মেয়েরা শত ভাগ নিরাপদ তা হয়ত না, কিন্তু এই দেশে সিগারেট খাওয়া লিঙ্গ ভেদে ক্ষতিকর না বরং স্বাস্থ্যের জন্য যে ক্ষতিকর, সেটা ছেলে মেয়ে সবার জন্যই প্রযোজ্য। তারপরেও কেউ জেনেশুনে নিজের শরীরের ক্ষতি করলে কেউ তাতে আপত্তি জানায় না। কেউ কোনো মেয়েকে হ্যারাস করলে মেয়ের পোশাক না, বরং ইতর মানসিকতা নিয়ে কথা বলে, বিচার চায় এবং হয়। একটা সময় এই ইউরোপে ডাইনি হত্যার নামে, লক্ষ লক্ষ নারী পুড়িয়ে মেরেছিলো। আজকে তারা যদি সভ্য হতে পারে, তারা যদি বোঝে যে, মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে কী করে শ্রদ্ধা করতে হয়, কী করে সভ্য, ভদ্র আচরণ করতে হয়, তাহলে আমরা কেন পারবো না?
চলেন একটু বুঝি, আজকে থেকে একটু প্র্যাকটিস করেন, দেখবেন একদিন অবশ্যই শিখে যাবেন। আজকে থেকে বুঝবেন যে, একটা মেয়ে মানেই সেক্স না, একটা মেয়ে মানেই আপনার বাবার সম্পত্তি না, সে একজন আলাদা মানুষ। তাকে সেভাবেই সম্মান করবেন। একটা এডাল্ট মেয়েকে আপনার নিজের চিন্তা চাপায় দেয়া যাবে না, একদম না। আপনাকে কেউ তার শিক্ষক হবার দায়িত্ব দেয়নি, আপনি একজন অপরিচিত মানুষ এবং অপরিচিত মানুষের মতো তাকে বিরক্ত না করে নিজের পথে হেটে যাবেন। সে যদি আইন ভাঙে তাহলে দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটা দেখবে, আপনি না। সিগারেট খেলে তার শরীরের ক্ষতি হয়, আপনার না। তাই এখানে আপনি কিছুই বলবেন না, একটা শব্দও না। আপনার দায়িত্ব হলো নিজের চরকাটাকে ভালো মতো তেল দিয়ে চকচকে রাখা। শুধু এইটুকু করতে পারলেই আপনি সভ্য মানুষ হয়ে যাবেন। কারও শ্রদ্ধার মানুষ, কারও প্রিয়জন , কারও খুব নির্ভরতার মানুষ হয়ে যাবেন। এটা নিশ্চই খুব কঠিন কাজ না,তাই না?
সম্প্রতি দেশে একটি ঘটনা ঘটেছে। আর তা হলো প্রকাশ্যে একজন তরুণী ধুমপান করছিল। আর এটা নিয়ে বাধে যত বিপত্তি। রাস্তায় থাকা সকলেই ঐ তরুণীকে প্রকাশ্যেই অপমান করতে থাকে। আর এ ঘটনা নিয়েই সৃষ্টি হয় নতুন করে নানা ধরনের জটিলতা।