Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / National / জানা গেলে কি কারনে নির্বাচন কমিশনারের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন না মাহবুব তালুকদার

জানা গেলে কি কারনে নির্বাচন কমিশনারের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন না মাহবুব তালুকদার

২০১৭ সাল থেকে পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালন শেষে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হলো। সোমবার দুপুরে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের শেষ দিনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদায়ী কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের লাশ পড়ে গেছে।’ এই লাশ কে সৎকারের দায়িত্ব নেবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন তিনি।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করলেও সেখানে ছিলেন না মাহবুব তালুকদার। মুক্তভাবে কিছু কথা বলতেই সাংবাদিকদের নিজ দপ্তরে ডেকেছেন বলে জানান তিনি।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি মুক্তভাবে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলাম। অন্য কমিশনারদের সংবাদ সম্মেলনে আমার কথা মানানসই হতো না।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা নিজেদের সফল দাবি করে বলেন, তাদের কিছু ছোটখাটো ভুল থাকতে পারে।

আর মাহবুব তালুকদার বলছেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে?

আলোচিত এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এটাই সত্য। নির্বাচনের নামে সারা দেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়া নির্বাচন বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকটের আশঙ্কার কথা জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।’

মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ‘আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক। তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে, সংকটের সমাধান হবে না।’ তবে নির্বাচন নিয়ে এমন সংকটের সমাধান প্রত্যাশা করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের গত পাঁচ বছরের কাজের বিশ্লেষণ করে তিনি জানান, ‘নির্বাচন কমিশনের বড় দুর্বলতা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা যেসব অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। লিখিতভাবে যেসব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। অধিকাংশ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করা হয় বা অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও তার ঠাঁই হয় না।’

তার মতে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাগুলো দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।

উন্নয়ন কখনো গণতন্ত্রের বিকল্প নয়- এমন মন্তব্য করে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমূলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই, গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না।’

বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে গণতন্ত্রের শর্তগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে বলে মনে করেন মাহবুব তালুকদার।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণেতাগণ আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনো গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়।’

রাজনীতির দখল ব্যবসায়ীদের হাতে যাচ্ছে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আইন প্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন-ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো?’

বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে কাছ থেকে কীভাবে দেখেছেন সেই মূল্যায়নও তুলে ধরেন মাহবুব তালুকদার। বলেন, ‘নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়।’

বিএনপির সুরে কথা বলেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যে বিএনপির পক্ষের লোক সেটা জানলাম মন্ত্রিপরিষদ সচিবের একটা প্রেস ব্রিফিং থেকে। বলা হয় আমি বিএনপির সুরে কথা বলি। কিন্তু আমি বিএনপির সুর জানি না। আমি নীরব গোষ্ঠীর ভাষা বুঝতে চেষ্টা করেছি। আমি ইসি হিসেবে পাঁচজনের একজন। কিন্তু একজনের পক্ষে কিছু করা যায় না। আমি গণতন্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে কমিশনে গণতান্ত্রিকভাবে সংখ্যালঘু হয়ে গেছি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরে কমিশনের সভায় আমাকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি।’

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বিভিন্ন সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও তার প্রভাব ব্য়ক্তিগত জীবনে আসবে না বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন মাহবুব তালুকদার।

About Ibrahim Hassan

Check Also

জাহ্নবী কাপুরের ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)

মন্দিরের সিঁড়ির একপাশে অসংখ্য ভাঙা নারিকেল। তার পাশে থেকে হামাগুড়ি দিয়ে উপরে উঠছেন বলিউড অভিনেত্রী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *