Wednesday , December 25 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে ধাক্কা, প্রতিবাদ করায় সস্ত্রীক মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার

বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে ধাক্কা, প্রতিবাদ করায় সস্ত্রীক মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার

১৪ ফেব্রুয়ারী সোমবার সন্ধ্যার পর স্ত্রীসহ হাঁটতে বেরিয়েছিলেন চট্টগ্রাম আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ। নগরীর গোলপাহাড় মোড় দিয়ে যখন তিনি হাঁটছিলেন, তখন হঠাৎ একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ ১৫-৮৯৬৬) এসে তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এমন ঘটনায় হতচকিত হয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ গিয়ে ওই গাড়ির চালককে এভাবে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে গাড়ি থেকে নেমে যাত্রীরা তাঁর সাথে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ও তাঁর স্ত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়। এ ঘটনায় ওই রাতেই চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাজির আবুল কালাম আজাদ বাদি হয়ে পাঁচলাইশ মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।

এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জয়নারায়ণপুরের মোখলেছুর রহমানের পুত্র রানা মর্তুজাকে (৪৫)। অন্য আসামিরা হলেন— ঢাকার বসুন্ধরা ডি-ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ৩০১ নম্বর বাসার বাসিন্দা শিশির মাহমুদ (৪০), রানা মর্তুজার দুই বোন ঢাকার বসুন্ধরা সি-ব্লকের বাসিন্দা মাসুকা সুলতানা (৪০) ও জিবান সুলতানা (২৮) এবং গাড়ির ড্রাইভার ঝালকাঠির রাজাপুরের বাসিন্দা আবদুর রহিম (৩৮)। জানা গেছে, প্রধান আসামি রানা মর্তুজা বেলজিয়ামপ্রবাসী। নোয়াখালী থেকে তিনি চট্টগ্রামে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টার দিকে জিইসি মোড়ের ওআর নিজাম রোড আবাসিক এলাকা সংলগ্ন ওয়েলফুডের সামনে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ তার স্ত্রীকে নিয়ে কফিশপ থেকে বেরিয়ে হেঁটে রাস্তা দিয়ে গোলপাহাড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে একটি সাদা গাড়ি বেপরোয়াভাবে হর্ন বাজিয়ে চলছিল। এর একপর্যায়ে হঠাৎ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহকে গাড়িটি ধাক্কা দেয়। তিনি এর প্রতিবাদ জানালে ওই গাড়িতে থাকা পাঁচ যাত্রী তেড়ে আসে। তারা এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহকে অশালীন ইঙ্গিত করে বলতে থাকে— ‘প্রেমিকা নিয়ে ঘুরতে আসছিস, আবার কথা বলছস।’

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ এ সময় বলেন, সঙ্গে থাকা মহিলা তার স্ত্রী, প্রেমিকা নয়। তিনি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। তখন গাড়িতে থাকা ওই পাঁচজন ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘কিসের ম্যাজিস্ট্রেট তুই? তুই ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট।’ চট্টগ্রাম দ্বিতীয় আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ তখন এমন ব্যাঙ্গোক্তির প্রতিবাদ জানালে ওই গাড়িতে থাকা সবাই মিলে তার পাঞ্জাবির কলার ধরে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এর একপর্যায়ে রানা মর্তুজা নামের একজন ম্যাজিস্ট্রেটের মুখে উপর্যুপরি ঘুষি মারতে থাকলে তার দাঁতের অর্ধেক অংশ ভেঙে যায় এবং ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে।

ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ এ সময় মাটিতে পড়ে গেলে গাড়ির যাত্রী রানা মর্তুজাসহ শিশির মাহমুদ নামের আরেকজন মিলে রাস্তায় পড়ে থাকা ইট দিয়ে তার মাথায় আঘাতের চেষ্টা করে। সেই আঘাত ঠেকাতে গিয়ে বাম হাতের কনুই ও বুকে আঘাত পান অলি উল্লাহ। মামলা এজাহারে বলা হয়, ওই গাড়িতে থাকা মাসুকা সুলতানা ও জিবান সুলতানা নামের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর স্ত্রী ইফফাত মৃধা আরিফার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যার চেষ্টাও করে। অন্যদিকে ওই গাড়ির ড্রাইভার আবদুর রহিম ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর গলা চেপে ধরে তাকেও শ্বাসরোধে হতার চেষ্টা করে।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়, একপর্যায়ে ঘটনার মূল হোতা রানা মর্তুজা নামের ওই তরুণ আরও লোকজনকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য মোবাইলে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আরও ৪-৫ জন এসে ম্যাজিস্ট্রেটকে টেনেহিঁচড়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তার ওপর আরও এক দফা হামলা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এ সময়ে কর্তব্য়রত টহল পুলিশ ঘটনার সাথে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হলেও শিশির মাহমুদ নামক একজন পালিয়ে যেতে পারেন। আহত ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। বর্তমানে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।

About Ibrahim Hassan

Check Also

দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা পিন্টু

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালাস পাওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *