গত ৭ ফেব্রুয়ারী সোমবার দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তার পরিচয়ে চার সদস্যের এক চোর সিন্ডিকেট প্রায় ২৫ ফুট লম্বা খুঁটির গোড়ার দিকের স্টিলের প্লেটসহ অর্ধেকাংশ বিক্রি করে স্থানীয় একটি ভাঙারির দোকানে। পরে রাত ১১টার দিকে বাকি অর্ধেক ভ্যানে করে নিতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে চোর চক্রটি। পরবর্তীতে স্থানীয় জনতা চোরদেরকে আটক করে অর্ধেক খুঁটিসহ পুলিশে দিলেও চার জনকেই থানা হাজত থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বাকি অর্ধেক খুঁটি বিক্রির টাকা ভাগাভাগি করার অভিযোগ উঠেছে চক্রটির বিরুদ্ধে।
চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনাটি ঘটেছে পূবাইল থানার ৪০নং ওয়ার্ডের মেঘডুবি পশ্চিম পাড়া সোনার বাংলা সড়কে। আটকৃতরা হলেন- সিটি করপোরেশনের পিওন শরিফুল, একই এলাকার ইয়ার খান (৪৪), তবির হোসেন (২৮), আরজু মিয়া(২৫)।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন, অর্ধেক খুঁটিসহ পুলিশ ছেড়ে দিলেও বাকি অর্ধেক কে দেবে? সঠিক তদন্ত হলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
ঘটনা সূত্রে ও ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, সোমবার রাত ১১টার দিকে পূবাইল থানার ৪০নং ওয়ার্ডের মেঘডুবি পশ্চিম পাড়ার জয় বাংলা সড়কে চার জনকে হাতেনাতে অর্ধেক খুঁটিসহ জনতা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রায় ১৬ ঘন্টা পর থানা হাজত থেকে দিনভর অনেক নাটকীয়তার পর স্থানীয় কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিষের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ ভাঙারির দোকানে প্রায় ২৫ ফুট লম্বা স্টিলের খুঁটির নিচের অর্ধেক দামি প্লেটসহ বিক্রি করে বাকি অর্ধেক আরজু মিয়ার ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে চোর চক্রের ৫ জন সোমবার রাত ১১টায়। পুলিশ খবর দিলে টহলরত পুলিশের এএসআই আলিম ৪ জনকে আটক করে অর্ধেক খুঁটিসহ থানায় নিয়ে যান। অন্য একজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় এএসআই আলীম উপস্থিত কয়েক জনের স্বাক্ষরও নেন।
অন্যদিকে বুধবার দুপুরের দিকে সোনার বাংলা সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের উদ্ধার করা অর্ধেক খুঁটি পড়ে রয়েছে রাস্তার উপর। বাকি অর্ধেকের নেই কোনো হদি।এলাকাবাসী জানান, এর আগে এই চক্রটিকে প্রায় ৩৩টি সৌর স্ট্রিট লাইটের দামি ব্যাটারিসহ জনতা আটক করে তাদেরকে ব্যাটারিসহ শিরিষ কাউন্সিলের নিকট সোপর্দ করেছিল।
চোর আটকের বিষয়ে পূবাইল থানার এএসআই আলিম যুগান্তরকে জানান, ‘ওরা চোর নয়, সন্দেহজনক ঘুরাফিরা করার জন্য এবং নাম ঠিকানা ঠিকমত বলতে পারছিল না তাই ধরে এনেছি। ওসি স্যার কাউন্সিলর শিরিষের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে। মামলা হয়নি।’
এ বিষয়ে একই থানার ওসি মহিদুল ইসলাম জানান, ‘সিটি করপোরেশনের খুঁটি, সিটি করপোরেশনের লোক, এসে নিয়ে গেছে। স্থানীয় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিষের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। রিপোর্ট কইরেন না।’
অবশ্য় এ বিষয় সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার লুৎফুল কবির জানান, ‘সরকারি সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। এ বিষয়ে পুলিশের কোনো গাফেলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুন্দর করে নিউজ করে দেন টনক নড়বে। এই চুরি রোধ করার দায়িত্ব আমাদের সবার।’
থানা থেকে জিম্মায় ৪ চোরকে অর্ধেক খুঁটিসহ ছাড়ানোর কথা স্বীকার করে স্থানীয় ৪০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিষ যুগান্তরকে জানান, ‘ওই খুঁটি ওরা অন্য জায়গায় স্থাপন করতে নিয়ে যাচ্ছিল। চুরি তাদের উদ্দেশ্যে নয়। তবে তাদের দোষ তারা দিনে না নিয়ে রাতে নিয়েছে।’
এদিকে সিটি করপোরেশনের খুঁটি কেটে চুরি করার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজিপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান যে, সিটির কোনোকিছু স্থানান্তর করতে অবশ্যই সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি লাগবে। খুঁটিসহ চোর-চক্রকে ধরার পর ছেড়ে দেওয়ার ফলে ক্ষুব্ধ এই কর্মকর্তা বিদ্যুত বিভাগে মামলা করা হবে বলেও জানান।