জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয় ঐক্য গঠন করেছেন যুক্তফ্রন্ট প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচিত দুই মিত্রের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে বেশ কিছু আগ্রহ জাগানিয়া মিল আছে। আবার দুজনার মধ্যে অমিলও অনেক।
প্রথমেই বি. চৌধুরী ও ড. কামালের মধ্যে মিলগুলো আলোচনা করা যাক। বি. চৌধুরী ও ড. কামাল দুজনই পেশাগত জীবনে খ্যাতির শিখরে উঠেছেন। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী। যুক্তফ্রন্ট সভাপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীও পেশাগত জীবনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক। এই দুই রাজনৈতিক মিত্রের আরেকটি মিল হচ্ছে, তাঁরা দুজনই রাজনীতিতে এসেছেন নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতাদের হাত ধরে। ড. কামাল কখনোই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে রাজনীতিতে ডেকে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুই ড. কামালকে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী বানান। বি. চৌধুরীও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তিনি টেলিভিশনে ’আপনার ডাক্তার’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। সেই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে জিয়াউর রহমান তাঁকে বিএনপির রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন। ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যে আরেকটি মিল হলো, তাঁদের নেতাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় দুজনের ভূমিকাই ছিল রহস্যময়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ড. কামাল অজ্ঞাত কারণে বিদেশে চলে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শুনে বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় তাঁর প্রতিক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী হিসেবে ড. কামাল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা কোনো প্রতিবাদও করেননি। আবার জিয়াউর রহমান যখন চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে নিহত হন, বি. চৌধুরী তখন সেখানেই ছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সময় বি. চৌধুরীর ভূমিকা কী ছিল বিএনপির মধ্যেই অনেক প্রশ্ন অনেক, রহস্য রয়েছে।

আরো পড়ুন

Error: No articles to display

এই দুজনের মধ্যে মিলের এখানেই শেষ নয়। তেমনি আরেকটি মিল হলো, দুজনই যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা নির্বাচনে ভালো করেছেন। কিন্তু যখনই তাঁরা এই দুটি দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেছেন তখনই তাঁদের জামানত থাকেনি। ’৯১ সালের পর কামাল হোসেন দুবার বাইরে থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জামানত হারিয়েছেন। আর ২০০৮ এর নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন বি. চৌধুরী। দুজনের মধ্যে আরেকটি মিল হলো, ড. কামাল ও বি. চৌধুরী দুজনকেই খুব দুঃখজনকভাবে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে নিজ নিজ দল থেকে বিতাড়িত করা হয়। পরবর্তীতে ড. কামাল গণফোরাম ও বি. চৌধুরী বিকল্পধারা নামে দুটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু দুজনের কেউই এক্ষেত্রে সফল হতে পারেননি। এটিও দুজনের মধ্যে আরেকটি মিল।
এতগুলো মিল থাকলেও ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যে বেশ কিছু অমিলও আছে। প্রথম অমিলটি হচ্ছে ড. কামাল কোনো বিপদের আভাস পেলে বাইরে চলে যান। আর বি. চৌধুরী বিপদ হলে ঘরের মধ্যে বসে থাকেন, কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলেন না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে বি. চৌধুরী হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ করেন। তিনি মানুষকে আপ্যায়ন করেন এবং মিষ্টভাষী হিসেবে সুপরিচিত। কিন্তু ড. কামাল হোসেন পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে রূঢ়। মানুষের সঙ্গে প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করেন। তাঁদের মধ্যে আরেকটি অমিল হচ্ছে বি. চৌধুরী নিজের রাজনৈতিক অবস্থানে স্বচ্ছ। তিনি যা বলেন স্পষ্ট করে বলেন। কিন্তু কামাল হোসেন রাজনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে অস্বচ্ছ। তিনি কী চান বা বলেন তা কখনো স্পষ্ট করেন না।
ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যে প্রচুর মিল-অমিল রয়েছে। তাঁদের জাতীয় ঐক্য গঠনের সূত্র ধরে এই মিল-অমিলগুলো নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ভালোই আলোচনা চলছে।  -আমাদেরসময়

News Page Below Ad

আরো পড়ুন

Error: No articles to display