নানা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে সম্প্রতি গত কয়েকমাস আগেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের (E-Orange) বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠতেই রীতিমতো দেশত্যাগ করেন রাজধানীর বনানী থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা (Sheikh Sohail Rana)। তবে দেশ ছেড়ে গেলেও বিপদ এড়াতে পারেননি তিনি। গত কয়েক চার মাস ধরে ভারতে (India) কারাগারে রয়েছেন তিনি।
চার মাস হলেও ভারত থেকে ফেরত আনা যায়নি রাজধানীর বনানী থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানাকে। তাকে বাংলাদেশে (Bangladesh) ফেরাতে অনুরোধ জানিয়ে পুলিশ সদর দফতরে জাতীয় কেন্দ্রীয় ব্যুরো (এনসিবি) ভারতের এনসিবিকে পাঁচ দফা চিঠি পাঠিয়েছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতে (India) প্রবেশ শেষ হওয়ার আগে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
ই-কমার্স কোম্পানি ই-অরেঞ্জের (E-Orange) ‘প্রতারণা’র ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ভারতে পালিয়ে যান সোহেল রানা। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে গ্রেফতার করে। সেখানে তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।
ঘটনার পর সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি নেপথ্যে থেকে ই-অরেঞ্জ নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনসিবির সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, ভারত দুইবার চিঠির জবাব দিয়েছে। তারা জানান, সোহেল রানার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিচার চলছে।
১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ১৮ আগস্ট গুলশান থানায় প্রথম মামলা হয়। এখন সোহেল রানা, তার কথিত স্ত্রী নাজনীন নাহার, বোন সোনিয়া মেহজাবিন (Mehzabin) ও শ্যালক মাশুকুর রহমানের বিরুদ্ধে মোট ১০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় জালিয়াতি, আত্মসাৎ, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। সোনিয়া মেহজাবিন ও মাশুকুর রহমান এখন কারাগারে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোহেল রানা পর্দার আড়ালে থেকে ই-অরেঞ্জ এবং এর সহযোগী ই-অরেঞ্জ ডটশপ, রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল, অরেঞ্জ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং অল জোন পরিচালনা করতেন। সোহেল রানাকে (Sohail Rana) জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় আটকে আছে মামলার তদন্ত। কারণ, গ্রাহকের কাছ থেকে কত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে এবং কোথায় স্থানান্তর করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
মামলাগুলো তদন্ত করছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। মামলার তদন্ত তদারকিকারী সিআইডির আর্থিক অপরাধ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, তদন্তের স্বার্থে সোহেল রানাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা জরুরি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোহেল রানার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চারটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)। মামলাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিসির বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম বলেন, সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার আর্থিক সম্পদ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যেত।
তবে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগের আলোকে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছে বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। এ গ্রাহকের করা মামলার আলোকে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও এ মামলায় ফেঁসে গেছেন দেশের বেশ কয়েকজন নামিদামি তারকারাও।