Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / খোলা আকাশের নীচে পিতার মরদেহ, দাফন কার্য বাদ দিয়ে সন্তানরা ব্যস্ত সম্পদ ভাগাভাগিতে

খোলা আকাশের নীচে পিতার মরদেহ, দাফন কার্য বাদ দিয়ে সন্তানরা ব্যস্ত সম্পদ ভাগাভাগিতে

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরইন্দ্রুরিয়া গ্রামের মাঝি বাড়িতে বৃদ্ধ আদম আলীর স্ত্রী মালেকা বেগম ১২ ফেব্রুয়ারী শনিবার সকালে নিজ বাড়িতেই মারা যান। একই দিন দিবাগত রাত ৩টার সময় আদম আলীও (৯৫) মারা যান। তার ৩ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।

মৃত বাবার লাশ খোলা আকাশের নিচে ১০ ঘণ্টা রেখেও সন্তানেরা বাড়ি ও জমির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের সুরাহা করতে পারেনি। বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের ভাগ নিয়ে দুই ভাই ও চার বোনের বাদানুবাদ ও লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার একপর্যায়ে ছুটে আসেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। দীর্ঘ সালিশ বৈঠকে বিরোধ নিরসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে গোয়েন্দা পুলিশ ও সাংবাদিকরা।

মারা যাওয়ার আগে আদম আলি তার ৪৮০ শতাংশ এবং তার স্ত্রীর ২৭ শতাংশ জমির পুরোটাই তাদের মেজ ছেলে মোহন মাঝিকে লিখে দেন। বিষয়টি তার বড় ও ছোট ছেলে এবং চার মেয়ে মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই ৭ ভাই বোনের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

এ ঘটনায় দুই ভাই ও চার বোন এক হয়ে তাদের বঞ্চিত করার অভিযোগে দেওয়ানী আদালতে বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদম আলীকে নিয়ে মেজো ছেলে মোহন মাঝি এক সঙ্গে বসবাস করছিলেন। আদম আলির মৃত্যুর জন্য মোহন মাঝিকে দায়ী করে আসছিল বাকি ৬ ভাইবোন। তাদের অভিযোগ জেলা আদালতের মাধ্যমে জমিজমার সুষ্ঠু বণ্টনের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় মোহন মাঝি পুরো জমি আত্মসাৎ করেন।

স্থানীয়রা জানান, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আদম আলির ৭ সন্তানের মধ্যে মেজো ছেলে মোহন মাঝির সঙ্গে বড় ও ছোট ভাই এবং চার বোনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই বিরোধ চলছিল। উভয়ের মধ্যে ৬টি মামলাও করা হয়েছিল। প্রায় দুই মাস আগে হায়দরগঞ্জ বাজারে চার শতাংশ জমি দখল করে ভবন ও দোকান নির্মাণে বাঁধায় কাউছার নামের ছেলেকে বেদম মারধর করা হয়। এ বিরোধের জেরে লাশ দাফন আটকে রাখা হয়।

এ বিষয়ে উত্তর চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ঘটনা শোনার পরই আমি খোঁজখবর নেই। আদম আলী জীবিত অবস্থায় ৭ ছেলেমেয়েকে নিয়ে জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে কয়েকবার বৈঠকে বসছিলেন। কিন্তু মোহন মাঝি ছাড়া অন্য সন্তানরা কথা না শুনায় তাকে সব জমি লিখে দিয়েছেন আদম আলি।

স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিক খান বলেন, শুক্রবার তাদের জমি-জমার বিষয়টির সমাধান করে দেব বলে আশ্বস্ত করা হলে আদম আলীকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেই।

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মোহন মাঝি বলেন, ‘শনিবার বিকালে হঠাৎ বাবা অসুস্থ হলে তাকে স্থানীয় ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাই। এ সময় ডাক্তার কিছু টেস্ট ও ওষুধ লিখে দেন এবং বাবাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে বলেন। আমি সে অনুযায়ী বাবাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাচ্ছিলাম। শনিবার রাতেই বাবা বেশি অসুস্থ হয়ে মারা যান। বাবা সুস্থ অবস্থায় সজ্ঞানে আমার নামে বাড়ি ও জমি লিখে দিয়ে গেছেন। আমার অপরাধ নাই।’

অন্যদিকর হতভাগ্য আদম আলীর বড় ছেলে ও চার মেয়ের অভিযোগ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাবা তাদের মেজো ভাই মোহন মাঝির কাছে থাকেন। কাছে থাকার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাদের বাবাকে ফুসলিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেন। এ নিয়ে গ্রাম আদালতে মামলা করলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। এর মাঝেই শনিবার সকাল ৭টার সময় তাদের মা মালেকা বেগম এবং তাদের বাবা রাতে মারা যাওয়ায় সম্পদের মালিকানা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

About Ibrahim Hassan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *