বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ বুধবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় কাজের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসসমূহকে ব্যবহারের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে এ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসসহ কয়েকটি দূতাবাসের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকসের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের ‘বিকৃত’ ব্যাখ্যা করে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তার (গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকস) বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে শুধু সচেতন মানুষের সঙ্গেই প্রতারণা করেনি, ওয়াশিংটন দূতাবাস বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসম্যান মিকস নিজেই বাংলাদেশ দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে নাকচ করে তার নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইট-সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দৃঢ় করা আমি সব সময় সমর্থন করব। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠউ নিশ্চিতকরণসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য কাজ করব।’
মার্কিন হাউস অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকস সুস্পষ্টভাবে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছেন বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে মিকসের বক্তব্যের ‘বিকৃত’ ব্যাখ্যা সরিয়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় ওয়াশিংটন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, ৩১ জানুয়ারি কংগ্রেসম্যান মিকসের বক্তব্যের প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেই প্রেস রিলিজটি যথারীতি বহাল রয়েছে, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দলীয়করণ করার নির্লজ্জ প্রমাণের ডিজিটাল ডকুমেন্ট।
বেলজিয়ামে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত একটি বেসরকারি সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে সেখানে অবস্থিত দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। আপনারা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি এখনো দেখতে পাবেন। যেখানে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মীর মতো বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এটি দূতাবাসকে রাষ্ট্রের বদলে আওয়ামী লীগের প্রচার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রমাণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন শহরের কর্মকর্তারা সরকারি দলের অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছেন—যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাকে ধূলিসাৎ করেছে। পেশাদারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হলেও মৌন থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এসব ঘটনা দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করেছে যে গোটা রাষ্ট্রকে এই ফ্যাসিস্ট সরকার কীভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য দলীয় হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ১৯৭৫ সালে তারা একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করে রাষ্ট্রকে দলীয় হাতিয়ারে পরিণত করেছিল। এখন তারা সংসদ, স্থানীয় সরকার কাঠামো, আমলাতন্ত্র, ফরেন সার্ভিস ক্যাডার থেকে শুরু করে সব ক্যাডার সার্ভিস, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী, বিচারিক কাঠামো, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও আইন সংস্কার কমিশনসহ সব প্রতিষ্ঠানকেই তারা কেবল অবৈধ ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার কাজে লাগিয়ে চলেছে।
এর আগে সকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতেই ওয়াসার পানির দাম আবারও বাড়ানো হচ্ছে।