সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission) মো. শিবলী সাদিক (Md. Shibli Sadiq) সহ ৭ ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে। অবশ্যে ডাক্তারি একটি মহৎ পেশা। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তিদের জন্য এই পেশা নানা ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এবং কিছু অসাধু ব্যক্তি নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমানের অর্থ। প্রায় সময় এমন অনেক অনিয়মকারীদের তথ্য উঠে আসছে প্রকাশ্যে। সম্প্রতি এমনি এক অনিয়মকারী ভুয়া এমবিবিএস সনদ নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানকরী চিকিৎসক মো. শিবলী সাদিক (Md. Shibli Sadiq) এর তথ্য উঠে এসেছে। এমনকি দুদক জানিয়েছে তার সম্পদের বিবরন।
চীনের (China) ভুয়া এমবিবিএস (MBBS) সার্টিফিকেট দিয়ে চিকিৎসা পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন গাজীপুরের কাশিমপুর চিকিৎসক হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. শিবলী সাদিক। তাকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission) (দুদক)। শনিবার (২৯ জানুয়ারি) গাজীপুরের হাসপাতাল থেকে দুদকের উপ-পরিচালক সেলিনা আক্তার মনির নেতৃত্বে একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। রোববার (৩০ জানুয়ারি) দুদকের জনসংযোগ বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি ভুয়া এমবিবিএস পাস সার্টিফিকেট দিয়ে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন করা রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে সাত চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে দুদক। তাদের ভিত্তিতে শিবলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারসহ ১২ ভুয়া চিকিৎসক ও ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় শিবলী সাদিককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মোঃ শিবলী সাদিক ১৯৯৮ সালে বিকেএসপি থেকে মানবিক বিষয়ে এসএসসি পাস করলেও ২০০০ ও ২০০১ সালে দুইবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে ব্যর্থ হন। এরপর প্যারামেডিক ডিপ্লোমা ডিগ্রি ও জাল এমবিবিএস সার্টিফিকেট নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর কর্নারে কাশিমপুর চিকিৎসক হাসপাতালে ডা. হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছিলেন। দুদক সূত্র জানায়, চীনে ভুয়া ডিগ্রি নিয়ে বিএমএ ও বিএমডিসি নিবন্ধন করেছে। এভাবে প্রতারণা করে সাভারে পাঁচতলা বাড়ি, দামি গাড়ি ও নিজস্ব হাসপাতালসহ বিপুল সম্পদ গড়েছেন তিনি। এর আগে চীনের তাইশান মেডিকেল থেকে ভুয়া এমবিবিএস পাস সনদসহ ৭ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে দুদক। গত ৩ জানুয়ারি মাহমুদুল হক নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে আগাম জামিন চান। তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন্য আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের এমবিবিএস সনদ জাল। ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর সনদ জাল। যাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেট রয়েছে তারা কখনো চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি।
তিনি আরও বলেন, যারা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এমবিবিএস সার্টিফিকেটের বৈধতা যাচাইয়ের জন্য দুদক ২০১৯ সালে ২১ জানুয়ারি, তারিখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চীনের তাইশান মেডিকেল ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষের কাছে সার্টিফিকেটের একটি অনুলিপি পাঠায়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত ১২ শিক্ষার্থীর এমবিবিএস সার্টিফিকেট ভুয়া। এ ছাড়া সনদের স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য হাতের লেখা বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়। এতে আরও দেখা যায়, সনদের স্বাক্ষরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে যে ১২ জনের কেউই চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি। কেউ কেউ শুধুমাত্র ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে গেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে মো. শিবলী সাদিক প্রতারনা করে আসছিলেন। এবং হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমানের অর্থ। তবে এবার তার সকল অনিয়মের কর্মকান্ড উঠে এসেছে প্রকাশ্যে। শুধু তাই নয় তার সকল সম্পদের হিসাব নিতে তদন্তে নেমেছে দুদুক। ইতিমধ্যে বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে দুদক।