গত ১৬ ফেব্রুয়ারী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ এতদিন জানা যায়নি। অবশেষে আজ রোববার বিকেলে দুদক কার্যালয়ে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
দুদক সচিব বলেন, ‘দুর্নীতির তদন্তে প্রভাবশালীদের নাম আসায় তাদের চাপে শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে যেসব বলা হচ্ছে, তা মোটেও সত্য নয়।’ তাহলে কেন এই কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হলো, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাকরিবিধি না মানার কারণে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তাকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে। এ বিষয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতি উদ্ঘাটনের কারণে তাঁদের প্রভাবে তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে, এটা মোটেও সত্য নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন কোনো প্রভাব আমলে নেয় না এবং প্রভাবিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না।’
লিখিত বক্তব্যে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের কারণ উল্লেখ করে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আপনি কমিশনের নিয়ম মানবেন না। অনুমোদন ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করবেন। আমার কোনো কিছুই আপনি মানবেন না, কমিশন কেন আপনাকে রাখবে? তিনি যদি চাকরিবিধি না মানেন, অফিস ব্যবস্থাপনা না মানেন, তাহলে তো হার্ডলাইনে যেতেই হবে।’
দুদক সচিব বলেন, ‘দুদক একটি সংবিধিবদ্ধ আইনি প্রতিষ্ঠান। আমাদের তদন্ত অনুসন্ধান যারা করে থাকেন, তারা একটা সেট রুলস অনুসরণ করেন। আমাদের বিধানের প্রসিডিংস রয়েছে, আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। তিনি একসঙ্গে ২৫টি (ব্যাংক অ্যাকাউন্ট) লিখিতভাবে বন্ধ করে দিলেন, মৌখিকভাবে বন্ধ করে দিলেন ৮টি। আপনি যদি সার্ভিস করেন, তাহলে সার্ভিস রুল মানতে হবে। নিজের মনগড়া কাজ করতে পারবেন না।
তাহলে শরীফ উদ্দিনের এসিআরে কেন তার কার্যক্রমকে অতি উত্তম বলা হয়েছিল, সে প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, ‘সম্ভবত ২০১৪ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। স্বভাবগত কারণে তাদের উৎসাহিত করার জন্য এবং তখন যেসব কাজকর্ম করেছেন, সেটির মূল্যায়ন করা হয়েছিল (এসিআরে অতি উত্তম লেখা হয়েছিল)।’
প্রসঙ্গত, দায়িত্বপালনের দুই বছরে চট্টগ্রামে বিভিন্ন উন্নয়ন ও অবকাঠামো কর্মকান্ডে দূর্নীতির অভিযোগে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পাশাপাশি নানাবিধ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন মো. শরীফ উদ্দিন। এর ফলে সেখানকার অনেক দূর্নীতিবাজ ব্যক্তিদেরই চক্ষুশূলে পরিণত হন তিনি। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালী কার্যালয়ে বদলি হয়ে আসার পর জীবননাশের হুমকি পাওয়ার পর শেষপর্যন্ত চাকরি হারাতে হয় তাঁকে।