গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন হলো—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন? বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। তবুও, বেশ কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলছে—তারেক শীঘ্রই দেশে ফিরছেন এবং তার আগমনকে ঘিরে দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন! গুলশানের কোন বাড়িতে তিনি থাকবেন সে সম্পর্কে অনেকেই আগাম তথ্যও দিয়েছেন। যদিও, এখনও পর্যন্ত সেই প্রতিবেদনের কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এমন প্রেক্ষাপটে, গত বৃহস্পতিবার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে তারেক রহমানকে খালাস দেওয়ার হাইকোর্টের রায়ও আপিল বিভাগে বহাল রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে তারেক সকল মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার জাল থেকে মুক্ত হয়েছেন। ফলস্বরূপ, পুরনো প্রশ্নটি আবার আলোচনায় উঠে এসেছে—তিনি কবে দেশে ফিরছেন?
বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের কাছ থেকে এখনও এই প্রশ্নের কোনও আনুষ্ঠানিক উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে, দেশ-বিদেশের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা এবং তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের শুরুতে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশের মাটিতে বরণ করে নিতে তারা প্রস্তুত। কিন্তু তারেক রহমানের দেশে ফেরার সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দিক জড়িত। তাই কোন সময়ে তিনি দেশে ফিরলে বিএনপির রাজনৈতিক অর্জনের পাশাপাশি তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উজ্জ্বল হবে, সেটি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কিছু আইনি সমস্যা ছিল। সেগুলোর সমাধান হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি তিনি শীঘ্রই দেশে ফিরবেন।
২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন তারেক রহমান। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান নিজের রাজনৈতিক দক্ষতা-দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই দলে নিজের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান গড়ে তোলেন। ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতা শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তথাকথিত দুর্নীতির মামলার আসামি হিসেবে তারেক রহমানকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তার বিরুদ্ধে আরও ১৩টি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় এবং তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ অভিযোগ ভিত্তিহীন হওয়ায় আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে কিছু করা যাবে না বুঝতে পেরে কারাগারে তাকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল ১/১১ সরকার হিসেবে পরিচিত সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্রীড়নকরা।
২০০৮ সালের আগস্টে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলি আদালতে গতি পায়। একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে সকল মামলায় জামিন দেওয়া হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি দেওয়া হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। তারেক রহমান এখনও তার পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে আছেন।
৮ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে, তারেক রহমান বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে পাঠানো হলে তারেক রহমান দলের নেতৃত্ব দেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে তিনি এখনও সুদূর লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি কেবল একটি দল হিসেবেই সুসংহত হয়নি, বরং দীর্ঘ সংগ্রামের পর দেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করতে তারেক রহমানের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তারেক রহমানের মামলা সম্পর্কে, তার একজন আইনজীবী এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তারেক রহমান সকল মামলা আইনগতভাবে মোকাবেলা করেছেন যদিও তিনি জানতেন যে সেগুলো মিথ্যা। কারণ, তিনি আইনকে সম্মান করেন। ঈশ্বরের কৃপায়, আদালত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকল মামলা থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন। কায়সার কামাল বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন এখনও অব্যাহত রয়েছে। এবং অবশ্যই, তারেক রহমান সংসদ নির্বাচনের আশেপাশে দেশে ফিরে আসবেন, ইনশাআল্লাহ।



