মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের মুখে ‘গলফ করো’ মানেই সব শেষ

বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত র‌্যাবের বিভিন্ন পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজের টিম নিয়ে খুন করতেন তিনি। গুম করা ব্যক্তিকে খুন করতে তিনি বলতেন-‘গলফ করো’।অর্থাৎ ওকে খুন করো।

জিয়াউল আহসান বর্তমানে কেরানীগঞ্জ বিশেষ কারাগারের ধলেশ্বরী ভবনের ডিভিশনপ্রাপ্ত সেলে বন্দি আছেন। টেলিফোনে জানতে চাইলে বিশেষ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সায়েফ উদ্দিন নয়ন বলেন, “তিনি কোন সুনির্দিষ্ট অপরাধে কারাগারে আছেন তা বলতে পারছি না। তবে তিনি ১৫টি মামলায় (ধারা ৩০২, ৩০৭, ১০৯, ৩২৬) বন্দি আছেন।”

তদন্তে জিয়াউল আহসানের নৃশংসতার অসংখ্য কাহিনি উঠে এসেছে। পলাতক শেখ হাসিনা ও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীর নির্দেশে বহু মানুষকে গুম ও খুন করেছেন তিনি। হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকীর একান্ত অনুগত ও বিশ্বস্ত ছিলেন জিয়াউল। তাদের নির্দেশে গুম হওয়া ভিকটিমদের প্রথমে “আয়নাঘর” নামক নির্যাতনকেন্দ্রে রাখা হতো। পরে বিভিন্ন কায়দায় খুন করে লাশ গুম করে দেওয়া হতো। জিয়াউল আহসান প্রায়ই ভিকটিমদের চোখ বাঁধা অবস্থায় যমটুপি পরিয়ে মাইক্রোবাসে করে পোস্তগোলা ব্রিজ, কাঞ্চন ব্রিজ বা কাঁচপুর ব্রিজে নিয়ে যেতেন। সেখানে গুলি করে লাশ ফেলে দেওয়া হতো শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে। একদিনে কাউকে দিয়ে ১১টি এবং আরেকজনকে দিয়ে ১৩টি খুন করানোর রেকর্ড রয়েছে। কখনো ভিকটিমকে মাইক্রোবাসেই ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করা হতো। এরপর লাশ রেললাইনের ওপর ফেলে রাখা হতো, যাতে ট্রেন এসে টুকরো টুকরো করে দেয়।

২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কমলাপুর থেকে টঙ্গি পর্যন্ত রেলপথে পাওয়া অজ্ঞাত লাশগুলোর প্রায় সবই ছিল জিয়াউল আহসানের খুন। বেশিরভাগ খুন হয়েছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। এ কাজে একটি নির্দিষ্ট নৌকা ব্যবহার করা হতো। ভিকটিমদের মাথায় যমটুপি পরিয়ে মাঝনদীতে নেওয়া হতো, সেখানে টুপি খুলে দেওয়া হলেও চোখ বাঁধা থাকত। এরপর মাথার একেবারে কাছে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করতেন জিয়াউল। ফিনকি দিয়ে রক্ত ও মগজ তার হাতে ছিটকে পড়ত। তখন তিনি আনন্দে উল্লাস করতেন। কখনো আগে খুন করা লাশও নৌকায় তুলে নিচে ও উপরে সিমেন্টভর্তি বস্তার সঙ্গে বেঁধে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হতো, যাতে লাশ ডুবে যায়। বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীরও এমন পরিণতি ঘটেছিল জিয়াউলের হাতে।

সিরিয়াল কিলার জিয়াউলের শিকার ১,০৩০ জন। বিএনপির প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়িচালক আনসার আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বনানীর রাস্তা থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের লোকেরা অপহরণ করে।

অপহরণের পর মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে একটি ‘কিলিং স্কোয়াড’ ইলিয়াস আলীকে হত্যা করে। হত্যার পর খুনিচক্র তার লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। এই চাঞ্চল্যকর গুম ও হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Scroll to Top