নির্বাচিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। খসড়ায় জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হলে কিংবা অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রেরিত খসড়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিসহ একটি বিস্তারিত কাঠামো প্রকাশ করা হয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বা ভেঙে গেলে নব্বই দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন বাধ্যতামূলক করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া প্রস্তাব করা হয়েছে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগে স্পিকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের “বাছাই কমিটি” গঠন করা হবে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলের উপ-নেতা এবং সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
এর পাশাপাশি, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে একজন করে যোগ্য প্রার্থীর নাম প্রস্তাব আহ্বান করা হবে। কমিটি এই প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে একজন যোগ্য নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করবে।
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো প্রার্থী চূড়ান্ত না হয়, তবে সরকারি জোট, প্রধান বিরোধীদল এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধীদল পৃথকভাবে মোট ১২ জন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করবে। এই তালিকা থেকে দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে একজন প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে।
উপরের প্রক্রিয়ায় যদি ঐকমত্য না আসে, তবে আপিল বিভাগের একজন এবং হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি কমিটিতে যোগ দেবেন। এরপর সাত সদস্যের কমিটি গোপন ভোটের মাধ্যমে “র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং” পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করবে।
খসড়ায় প্রধান উপদেষ্টার বয়সসীমা ৭২ থেকে ৭৫ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন হবে, যা বিশেষ পরিস্থিতিতে আরও ৩০ দিন বাড়ানো যেতে পারে। নতুন সংসদ গঠিত হলে এই সরকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে।
এছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টা সর্বোচ্চ ১৫ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করতে পারবেন, যারা মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করবেন। কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে পূর্বে প্রস্তুত করা র্যাঙ্কড ভোটিং তালিকা থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যক্তি নিয়োগ পাবেন।
সনদে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে ত্রয়োদশ সংশোধনীর ধারা অনুসরণ করা যেতে পারে, তবে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।



