যেভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিনের বর্ণনা

মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের খাস কামরায় তিনি এই জবানবন্দি দেন।

পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁকে আদালতে হাজির করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন তাঁর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। আদালত সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, জাফরিন আদালতে স্বীকার করেছেন যে তিনি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, তিনি স্বীকার করেছেন যে বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সভায় বক্তব্য রেখেছিলেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পরই নেতা-কর্মীরা ঢাকায় সমবেত হবে এবং পরে শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। এসব পরিকল্পনা ওই বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকের অংশগ্রহণকারীরা জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারও করেন।

৭ আগস্ট জাফরিনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে বুধবার রাত (৬ আগস্ট) ডিবির একটি দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গোপন বৈঠকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে মেজর সাদিককে আটক করা হয়। সেনা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তিনি বর্তমানে ক্যান্টনমেন্টে রয়েছেন। সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জাফরিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় গত ১৩ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানার এসআই জ্যোতির্ময় মণ্ডল সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ৮ জুলাই বসুন্ধরার কাছে কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাসহ ৩০০–৪০০ জন অংশ নেন। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পেলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ঢাকায় সমবেত হবেন, শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন।

একই মামলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদুজ্জামান মোল্লার স্ত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা এবং বরগুনার সোহেল রানাকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে ১৬ জুলাই কারাগারে পাঠানো হয়। ২৯ জুলাই আরও আটজনকে কারাগারে পাঠানো হয়—চুয়াডাঙ্গার আজিজুল মিজি, ফরিদপুরের আনজুমান আরা বেগম, ঢাকার সাভারের সুলতান মাহমুদ ওরফে তছলিম মাহমুদ, পটুয়াখালীর মো. নাঈম হাওলাদার, ভোলার মো. হেলাল উদ্দিন, নরসিংদীর মো. ইমরান হোসেন, শরীয়তপুরের মুক্তা আক্তার এবং রাজশাহীর নবিউল ওরফে নবু।

৩০ জুলাই আরও চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়—মানিকগঞ্জের রাজীব মিয়া, নওগাঁর ওমর ফারুক সৈকত, ঢাকার বংশালের হাজি নাসির আহমেদ এবং নোয়াখালীর মো. এনাম হোসেন সুজন। ৩১ জুলাই নেত্রকোনার জাহিদ হোসেন এবং সিলেটের আনার মিয়াকেও কারাগারে পাঠানো হয়।

৩ আগস্ট রাজবাড়ীর প্রীতম কুমার দে ও শফিকুল ইসলাম সজীবকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ২২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরেক আসামি আদনান বর্তমানে সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। ৭ আগস্ট রিমান্ড শুনানিতে জাফরিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।

Scroll to Top