গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন,
“অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান আছে। ১৯৭২ সালের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী মানুষ। এই দেশের ইতিহাস শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ছাড়া লেখা সম্ভব নয়। কিন্তু ইতিহাসের অনেক নায়ক সময়ের পরিক্রমায় ভিলেনে পরিণত হন। শেখ সাহেবও নায়ক থেকে ভিলেনে রূপ নিয়েছেন। আর তার মেয়ের ক্ষেত্রে, যদি ভিলেনের থেকেও খারাপ কিছু থাকে, তিনি সেটাই হয়েছেন।”
সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে রাজশাহী জেলা ও মহানগর ছাত্র অধিকার পরিষদের আয়োজনে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নুরুল হক নুর আরও বলেন,“১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা ভুল করেছিলাম। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতাকে দেবতা বা অবতার ভেবে দেশের সমস্ত ভাগ্য তার হাতে সঁপে দিয়েছিলাম। আপনারা দেখেছেন, সেই অবিসংবাদিত নেতা কীভাবে নিন্দিত হয়েছেন, গণতন্ত্রের নেতা হয়েও কীভাবে একদলীয় স্বৈরশাসন, ফ্যাসিবাদ এবং বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গত ১৬ বছরে তার মেয়ে ভারতীয় তাবেদার হয়ে বাংলাদেশের জনআকাঙ্ক্ষাকে পিষে দিয়ে দেশকে নরকে পরিণত করেছেন। এই সাজা পেয়েছেন বাবা যেমন, তেমনি কন্যাও।”
তিনি মন্তব্য করেন, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।“ইতিহাসের অন্যতম বড় শিক্ষা হলো— ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। গত ১৬ বছরে যারা নির্যাতিত ছিল, আজ অনেকেই দানবে পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় দখল, চাঁদাবাজি, মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন, এমনকি অন্য দলের লোকদের এলাকায় থাকতে দিয়ে মাসোহারা নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ এটা করেছিল, ছাত্রলীগ-যুবলীগও করেছিল। তারা সীমান্ত পেরিয়ে কাপড় ছাড়া পালিয়েছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও জুতা পরার সময় পাননি। দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, বায়তুল মোকাররমের খতিব— সবাই একসঙ্গে পালিয়েছেন। এমন দৃষ্টান্ত থাকার পরও যদি কেউ শিক্ষা না নেয়, তাদেরও ভবিষ্যতে নির্মম পরিণতি অপেক্ষা করছে।”
তিনি বলেন,“২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান কোনো রাজনৈতিক দলের ডাক বা নির্দেশে হয়নি। দেশের জনগণ— ছাত্র, যুবক, তরুণরা— সময়ের প্রয়োজনে রাস্তায় নেমেছিল। এর সূচনা হয়েছিল ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে। সেদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা রুখে দাঁড়িয়েছিল, যার ফল আজকের ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান।”
সংসদের উচ্চকক্ষে সব দলের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে নুরুল হক বলেন,“বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চায়। যদিও নিম্নকক্ষে তা না-ও হতে পারে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় প্রায় সব রাজনৈতিক দল উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে সম্মত হয়েছে। এর মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদ হবে। তাই আমরা বলেছি, আগামী নির্বাচন ও সংসদে উচ্চকক্ষে সব রাজনৈতিক দলের পিআর পদ্ধতিতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।”
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলেন,“দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কাকে ভোট দেবে। মাত্র ১২ শতাংশ বিএনপিকে, ১০ শতাংশ জামায়াতকে ভোট দিতে চায়— মোট ২২ শতাংশ। বাকি ভোটারদের মধ্যে বিশেষ করে ৪৮ শতাংশ অনিশ্চিত, যারা বিএনপি-জামায়াত কাউকে ভোট দেবে না। ১৪ শতাংশ ভোটার বলতে চায়নি কাকে ভোট দেবে। অর্থাৎ এই ৪৮ শতাংশের সিদ্ধান্ত অজানা।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,“আপনাদের সামনে সুযোগ আছে, অপার সম্ভাবনা আছে। যদি জনগণের মন জয় করতে পারেন— যারা ট্রাক মার্কায় গণঅধিকার পরিষদের হয়ে নির্বাচন করতে চান— এবং বোঝাতে পারেন পুরোনো পথে দেশ চলবে না, তরুণদের সুযোগ দিতে হবে, যদি মানুষের কাছে যেতে পারেন— জনগণ আপনাদের গ্রহণ করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন,“অনেকেই আমাদের উপহাস করেছিল। ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সন্দীপ চন্দ্র রায় বলেছিলেন, ‘ভিপি নূরের ৫০ জন লোক আছে? সে ডাকসু নির্বাচন করবে?’ শিক্ষার্থীরা এর জবাব দিয়েছে।”
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার ইকবাল বাদল। এতে গণঅধিকার, ছাত্রঅধিকার ও যুবঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এর আগে দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স সম্মেলন কক্ষে “দাসত্ব নাকি মুক্তি: শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ছাত্র সংসদ” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন নুরুল হক নুর।



