ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস অঞ্চলে পাঁচজন বাংলাদেশিকে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। গত শনিবার ও রবিবার এই অভিযান চালানো হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নিজেদের আওয়ামী লীগ সদস্য এবং একজন নিজেকে পুলিশ সদস্য বলে দাবি করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, চারজনকে স্থানীয় জনতা ও পুলিশ আটক করছে। এক ভিডিওতে হিন্দিতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা শেখ হাসিনার দল করতাম। অবৈধ সরকার এদেশে চলে এসেছে। তখন ওই আমাদের রাস্তা দেখিয়ে এদেশে নিয়ে এসেছে। আমাদের বাংলাদেশে আমাদের নিরাপত্তা…’ এর পরের অংশে অনেক মানুষের কথার কারণে আর কিছুই স্পষ্ট শোনা যায়নি।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং মেঘালয় পুলিশের যৌথ অভিযানের ফুটেজে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস এলাকায় এক হামলার ঘটনায় চার বাংলাদেশিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনজনের হাত বাঁধা, তারা কেবল শর্টস পরা; একজনের গায়ে ছেঁড়া টি-শার্ট, বাকি দুজনের গায়ে কোনো জামা নেই। তাদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ তাদের নিয়ে যাচ্ছে এবং শত শত মানুষ পেছনে হাঁটছে।
ভারতের গণমাধ্যম, বিশেষ করে শিলং টাইমস, জানিয়েছে যে ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার রংদাংগাই গ্রামে, যা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের কাছে। অভিযোগ অনুযায়ী, চারজন বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে এক স্থানীয় যুবককে হামলা, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত ছিল। শনিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন—জামালপুর জেলার জাহাঙ্গীর আলম (২৫) ও মারুফুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের সায়েন হোসেন এবং কুমিল্লার মাহফুজ রহমান। মারুফুর রহমান নিজেকে পুলিশ সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। রবিবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও গ্রামের মোবারক মিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলসের পুলিশ সুপার বি. জিরিওয়া বলেন, “গ্রামবাসীর সহায়তায় রবিবার সকাল ৭টার দিকে খোঞ্জয়ের কাছে গিলাগোড়া গ্রাম থেকে শেষ সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়। তিনি তাহিরপুরের কলাগাঁও গ্রামের মোবারক মিয়া।”
শিলং টাইমস-এর অনলাইন সংস্করণে “এসডব্লিউকেএইচে যুবকের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা ৫ বাংলাদেশি অপরাধী” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮ আগস্ট সন্দেহভাজন বাংলাদেশি সশস্ত্র অপরাধীদের একটি দল রংদাংগাই গ্রামের ২১ বছর বয়সী বলসরাং এ. মারাককে হামলা ও অপহরণ করে। এর পর পুলিশ, বিএসএফ ও স্থানীয়রা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী খোঞ্জয় এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি চালায়। শনিবার চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে একজন নিজেকে বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে দাবি করেন। সকালে গ্রামবাসীরা প্রথম অভিযুক্তকে আটক করে এবং পরে পুলিশ-বিএসএফ যৌথ দল চিবক বন থেকে বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
মেঘালয়ের হাইল্যান্ড পোস্ট-এর তথ্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থল থেকে একটি বাংলাদেশি পুলিশ কনস্টেবলের পরিচয়পত্র, হাতকড়া, ম্যাগাজিন কাভার, পিস্তলের হোলস্টার, ওয়্যারলেস সেট, মোবাইল ফোন, মুখোশ, কুঠার, তার কাটার যন্ত্র এবং বাংলাদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়েছে।



