বাংলাদেশে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে নিজেকে ‘বলির পাঁঠা’ দাবি করেছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ও সাবেক ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ দ্য গার্ডিয়ান-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মামলাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
৪২ বছর বয়সী লেবার পার্টির এই নেত্রী বলেন, গত সপ্তাহে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে, ঢাকার পূর্বাচলে জমি বরাদ্দে প্রভাব খাটানোর অভিযোগে তাকে ও আরও ২০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার শুনানি আগামী ১১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে টিউলিপ জানিয়েছেন, তিনি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সমন পাননি বা অভিযোগপত্র দেখেননি। তার ভাষায়, “আমি যেন এক অদ্ভুত দুঃস্বপ্নের মধ্যে আটকে আছি, যেখানে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে কিন্তু আমি জানিই না আমার বিরুদ্ধে আসল অভিযোগ কী।”
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় প্রয়োজনে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার প্রক্রিয়া চলতে পারে।
টিউলিপ জানান, গত বছরের জুলাইয়ে লেবার পার্টির নির্বাচনী জয়ের পর তিনি অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং নিজের কাজ উপভোগ করছিলেন। একই সময়ে বাংলাদেশে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতন হয়। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর অর্থনীতিবিদ ও হাসিনার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসেন এবং তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনা শুরু হয়।
প্রথমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে হওয়া চুক্তি থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়, যা টিউলিপ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দেন। পরে ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রসে একটি ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার অভিযোগ ওঠে, যার ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন।
নিরাপত্তাজনিত কারণে অন্যের মালিকানাধীন বাড়িতে থাকার বিষয়েও টিউলিপ সমালোচিত হন, তবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের নীতিগত আচরণবিধি পর্যালোচনার স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তার আর্থিক বিষয়াদি খতিয়ে দেখে অভিযোগ থেকে তাকে মুক্তি দেন।
টিউলিপ অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের ক্ষমতা পরিবর্তনের পর তার বিরুদ্ধে ‘নোংরা রাজনীতি’ চালানো হচ্ছে। তার ভাষায়, “এটি মুহাম্মদ ইউনূস ও আমার খালা শেখ হাসিনার মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফল, আর আমি তার শিকার। বাংলাদেশে যারা অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত, কিন্তু আমি তাদের মধ্যে নই।”



