ভারতের কলকাতার একটি ব্যস্ত উপনগরীর বাণিজ্যিক ভবনের অষ্টম তলায় নিয়মিত যাতায়াত করছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কয়েক শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের নেতা। এই ভবনের একটি ছোট অফিসঘরেই দলীয় ‘পার্টি অফিস’ গড়ে উঠেছে।
বিবিসির অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই অফিসে চলমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ভারতে অবস্থানরত নেতাদের অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে আওয়ামী লীগের বড় অংশ ভারতে অবস্থান করছে। শুরুতে তারা নেতাদের বাসায় ছোট পরিসরে বৈঠক করতেন, পরে একটি নির্দিষ্ট স্থানের প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই সূত্রেই তৈরি হয় এই বাণিজ্যিক অফিসঘরটি, যেখানে এখন ৩০-৩৫ জন নেতা গাদাগাদি করে বৈঠক করেন। বড় পরিসরের সভা হয় ভাড়া করা রেস্তোরাঁ বা ব্যাংকোয়েট হলে।
এই অফিসের বাহ্যিক কোনো পরিচয় নেই — কোনো সাইনবোর্ড নেই, শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখা হয়নি। এক নেতা জানান, “আমরা চাইনি ঘরটির পরিচিতি বাইরে জানানো হোক, এটি শুধু আমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছি।”
ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতারা নিয়মিত এই অফিসে যাতায়াত করেন। কেউ পরিবার নিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন, কেউ একসাথে কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাটে রয়েছেন। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা ও আশপাশে অন্তত ৮০ জন সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য এবং প্রায় ২০০ জন নেতা বসবাস করছেন।
দীর্ঘমেয়াদি প্রবাস জীবন চালাতে গিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়, যা কোথা থেকে আসে সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, “অগাস্টের পর যে অন্ধকার নেমেছে, তা অতিক্রম করা কঠিন। এই সময়ে দেশ-বিদেশে থাকা নেতা-কর্মীরাই সাহায্য করছেন। কর্মীরা কষ্ট করলেও মনোবলই মূল শক্তি।”
দলের অন্যান্য নেতারা জানান, অনেক সময় পরিবারের সদস্যরা ব্যক্তিগত খরচের টাকা পাঠাচ্ছেন, কেউ নিজস্ব সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করছেন। সাবেক এমপি পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, “জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। ঢাকায় গাড়ি ছাড়া চলা যেত না, এখন গণপরিবহনেই চলছি। আমি একটি ফ্ল্যাটে তিনজনের সঙ্গে থাকি। বাস, ট্রেন, মেট্রো, এমনকি সহকর্মীর বাইকেও চড়ি। কখনো কয়েকজন মিলে ট্যাক্সি ভাড়া ভাগাভাগি করি।”
ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার খরচ তুলনামূলক কম হলেও নেতাকর্মীদের জীবনযাপন করতে গিয়ে অনেকেই আর্থিক চাপে রয়েছেন। তবু রাজনৈতিক সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
দলের কার্যক্রম কতদিন চলবে বা তারা কখন দেশে ফিরবেন—এই বিষয়ে কেউ নিশ্চিত কিছু বলেননি। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “দিনক্ষণ ঠিক করে রাজনৈতিক লড়াই হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।”



