জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (৪ আগস্ট) রাত ২টায় এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
ফেসবুক পোস্টে আব্দুল হান্নান মাসউদ লিখেছেন, “আগামীকাল (৫ আগস্ট) জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র পেয়েছি। শুনেছি, এই সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের বৈধ মূলদেহ—১৫৮ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ককে আমন্ত্রণ জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। হয়তো কিছু আসন বরাদ্দ দেবে, কিন্তু ১৫৮ জনের জন্য জায়গা হবে না। জানি না, শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্যও কি কোনো আসন বরাদ্দ থাকবে। যাদের সাহসিকতা ও নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান ও সরকার তৈরি হয়েছে, বছরের মধ্যেই তারা যেন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “আমার সহযোদ্ধারা—যারা মৃত্যুর ভয় না করে হাসিনার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন—যদি তারা এবং শহীদ পরিবারগুলো তাদের প্রাপ্য সম্মান না পান, তাহলে আমি, আব্দুল হান্নান মাসউদ, ব্যক্তিগতভাবে আগামীকালের জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি।”
পোস্টটির শেষে তিনি লেখেন
“#Loud_And_Clear”
অন্যদিকে, বিএনপির শীর্ষ পাঁচ নেতা জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বাকি চার সদস্য হলেন—দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকটি রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এর আগে বিকেলে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, “উন্নয়ননির্ভর রাজনীতি, দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা—এসব আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলোর অন্যতম। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দেশের জনগণের সমর্থন এবং বিএনপির প্রতি তাদের রায় প্রয়োজন। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই বিএনপির রাজনৈতিক ক্ষমতার একমাত্র উৎস। জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করব।”
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের মানুষের কাছে যেন এই পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরা হয়।
তারেক রহমান আরও বলেন,“সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। এটি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী পাঁচ বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন গাছ লাগানো। এই গাছগুলো যেমন পরিবেশ রক্ষা করবে, তেমনি বাংলাদেশকে বন্যা ও খরা থেকেও সুরক্ষা দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে দেশের মানুষ রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। শহীদ পরিবারের সদস্যদের মুখ দেখলেই সেই নির্যাতনের প্রমাণ মেলে, যারা আজকের সমাবেশে উপস্থিত রয়েছেন।”
তারেক রহমান আরও বলেন,“এটা শুধু জুলাই-আগস্টের বিষয় না। গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের অধিকারের কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়ে সেই পলাতক স্বৈরাচারের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমরা প্রতিটি শহীদ এবং নির্যাতিত মানুষকে যথার্থ সম্মান জানাতে চাই। তাদের ত্যাগকে সম্মান জানাতে হলে আমাদের সামনে এগোতেই হবে। এই দেশকে সামনে নিয়ে যেতে হবে। তাদের যে স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই হলো তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একমাত্র উপায়।”



