‘কাউয়া কাদের দায়ী!’ আদালতে খোকনের করুণ সাক্ষ্য কাঁদাল সবাইকে

খোকন চন্দ্র বর্মণ ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের চরম বর্বরতার একটি মর্মান্তিক উদাহরণ। পুলিশের গুলিতে তার বাম চোখ, নাক ও মুখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়—ফলে তার চেহারা এতটাই বিকৃত হয়ে যায় যে এখনকার ছবি দেখে আতঙ্ক জাগে। রোববার (৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন খোকন।

সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বারবার একটি নাম উচ্চারণ করেন খোকন—“কাউয়া কাদের”। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে একাধিকবার তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি ওবায়দুল কাদেরকে বোঝাচ্ছেন? উত্তরে খোকন ক্ষোভের সঙ্গে ছয়-সাত বার পুনরায় বলেন, “আমি বলেছি কাউয়া কাদের।”

সেদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে খোকন আদালতে বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুরে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশ আমাকে গুলি করে—যার ফলে আমার বাম চোখ, নাক ও মুখ ধ্বংস হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষকে সেদিন হত্যা করা হয়েছে। আমি নিজের চোখে অনেককে গুলিবিদ্ধ হতে দেখেছি। আমার ওপর হামলার জন্য এবং গণহত্যার জন্য আমি শেখ হাসিনা, কাউয়া কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, শামীম ওসমান ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দায়ী করছি।”

ট্রাইব্যুনালে বারবার “কাউয়া কাদের” উচ্চারণ করায় কিছুটা হাস্যরসের মুহূর্তও তৈরি হয়, তবে খোকনের মুখের অবস্থা দেখে সেই হাসি মুহুরতেই বিষাদের রূপ নেয়।

খোকনের মুখের উন্নত রিকনস্ট্রাকশন সার্জারির জন্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তাকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। ২২ এপ্রিল রাশিয়ার একটি স্থানীয় হাসপাতালে তার প্রথম ধাপের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

সার্জারির অংশ হিসেবে প্রথমে তার মুখের থ্রিডি মডেল তৈরি করা হয়। এরপর তার নিচের চোয়ালে (ম্যান্ডিবল) টাইটেনিয়ামের প্লেট স্থাপন করে অস্টিওসিন্থেসিস করা হয়। এই অপারেশনের সময় তার মুখ থেকে তিন থেকে চারটি ছররা গুলির টুকরো বের করা হয়। খোকন চন্দ্র বর্মণ ৭ মে দেশে ফেরেন।

Scroll to Top