আসিফের বাবার দাপটে মুরাদনগর ছাড়া তিন পরিবার

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কড়াইবাড়ীতে গত ৩ জুলাই ভয়াবহ ত্রিপল হত্যাকাণ্ডে নিহত হন রুবি আক্তার, তার ছেলে রাসেল ও মেয়ে জোনাকি। নিহতদের অন্য সন্তান রুমা আক্তার এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত হয় ১১ মাস বয়সী শিশু রাইসাও। এই নৃশংস হামলা থেকে টয়লেটে লুকিয়ে রক্ষা পান রিক্তা আক্তার ও তার ভাবী মিম আক্তার। কিন্তু এখন বিচার চাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারকেই পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগী রিক্তা আক্তারের অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি শিমুল বিল্লাহ, যিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি এবং তার সহযোগীরা স্থানীয় সরকার ও যুব উন্নয়ন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার আশ্রয়ে রয়েছেন, যার কারণে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না।

রিক্তা বলেন, “মূল আসামিরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমাদের হুমকি দিচ্ছে—পেলে শত টুকরো করে মারবে। তাই আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি।”

শুধু ত্রিপল হত্যাকাণ্ডই নয়, গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শিখা রানীর ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন।
স্কুলের একটি কক্ষে ৬ ঘণ্টা ধরে আটকে রেখে বিবস্ত্র করে হেনস্তা করা হয় তাকে। পরে গ্রামজুড়ে ঘুরিয়ে অপমান করা হয়। ভিডিওটি ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে।

ভিডিওতে যাদের দেখা যায়, তাদের মধ্যে রয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা ও স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন। শিখা রানীর দাবি,

“২০১৪ সালে বিল্লাল হোসেনকে দুর্নীতির কারণে বহিষ্কার করার পর থেকে তিনি প্রতিশোধ নিতে থাকে। এখন তার ছেলে উপদেষ্টা হওয়ায় ক্ষমতা আরও বেড়েছে।”

ওই সময়ের স্কুল সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, বিল্লাল হোসেন স্বাক্ষর জাল করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। বর্তমানে ক্ষমতা ফিরে পেয়ে তারা মোহাম্মদ আলীর পরিবারকে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে হয়রানি করছেন।

তিনি আরও জানান,“চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ দিয়ে ধরে এনে রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে এবং সামাজিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পাই।”

স্থানীয় মাছচাষি দুলাল চন্দ্র অভিযোগ করেন, উপদেষ্টার বাবার নির্দেশে শিমুল চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা পুকুর দখল করে এবং গাছ কেটে নেয়।

বিল্লাল হোসেন নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “শিমুল চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার ছবি ছড়িয়ে বলা হচ্ছে আমি মার্ডারকারীদের আশ্রয় দিচ্ছি। ছবিটা ৬ মাস আগের। এটা প্রচার করে আমাদের দোষী বানানো হচ্ছে। বিএনপি নেতা কায়কোবাদ ভাবছেন আমার ছেলে নির্বাচনে দাঁড়াবে—তাই এসব ছড়ানো হচ্ছে।”

তিনি হুমকি দিয়ে আরও বলেন, “কারা এসব ছড়াচ্ছে, আমরা সব জানি। তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।”

বাবার বিরুদ্ধে ওঠা ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফোন রিসিভ করেননি।

Scroll to Top