এবার হাসিনাকে কোথায় পাঠাচ্ছে ভারত?

দিল্লির এক অভিজাত এলাকায় নিরাপত্তা বেষ্টিত একটি অ্যাপার্টমেন্টে এখন কার্যত গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও এক সময়ের ক্ষমতাধর নেত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারিতে থাকা এই বাসস্থানটি আর শুধু রাজনৈতিক আশ্রয় নয়—এটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির এক নতুন বার্তা বহন করছে।

যিনি এক সময় ভারতের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন, সেই শেখ হাসিনার নাম এখন মোদি প্রশাসনের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারিভাবে কিছু না বলা হলেও, দিল্লির অভ্যন্তরীণ মনোভাব স্পষ্ট—তারা হাসিনাকে রাখতে চাইছে না, আবার প্রকাশ্যে তাকে ফিরিয়েও দিচ্ছে না।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও শেখ হাসিনার নাগাল পাচ্ছেন না। লন্ডন থেকে দিল্লি গিয়ে দলের মুখপাত্র হাসান মাহমুদ তিন সপ্তাহ ধরে অপেক্ষায় আছেন, কিন্তু দেখা হয়নি। এমনকি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারত এখন এক কৌশলগত বাস্তবতার পথে হাঁটছে। মুখে কিছু না বললেও, তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কার্যত স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও সম্পর্ক এখনো জমাট বাঁধা—সীমান্তে পুশ-ইন, sporadic গোলাগুলি, এবং চিকিৎসা ভিসায় নিষেধাজ্ঞা সেই বরফ গলার পথে বাধা হয়ে আছে।

বাংলাদেশে সদ্য নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক এখনো কার্যকর কোনো সংলাপ শুরু করতে পারেননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগে একচেটিয়া আস্থা রেখে ভারত বড় কূটনৈতিক ভুল করেছে। এখন তারা বিকল্প খুঁজছে, কিন্তু তা সহজ নয়।

এদিকে, ড. ইউনূসের সরকার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়, তবে অন্তত একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে। ভারত আপাতত দেখছে ও অপেক্ষা করছে—বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে কি না।

এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা এখন আর কেবল একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ নন, বরং হয়ে উঠেছেন ভারত ও আওয়ামী লীগের কাছে এক অস্বস্তিকর স্মৃতি। যে নেত্রী মিত্রতার ছায়ায় যাত্রা শুরু করেছিলেন, তিনিই আজ সেই মিত্রের কাছেই অবাঞ্ছিত।

শেষমেশ, প্রশ্ন রয়ে যায়—শেখ হাসিনা কি ফিরতে পারবেন? নাকি ইতিহাস তাকে এক প্রান্তিক পাতায় লিখে রাখবে—যেখানে লেখা থাকবে, “স্বৈরাচারকে শেষমেশ তার মিত্ররাও ত্যাগ করে।

Scroll to Top