বাংলাদেশিরা হারাচ্ছে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন, ভিসা আটকে দিয়েছে একের পর এক দেশ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে শ্রমবাজারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অসৎ উপায় অবলম্বনের কারণে এসব দেশের ভিসা প্রাপ্তি ক্রমশ কঠোর হচ্ছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে কিছু জটিলতা থাকলেও দেশের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে জবাবদিহিতামূলক করে অভিবাসন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করলে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান সম্ভব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চল, পূর্ব ইউরোপ এবং প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশ একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অবস্থান, জালিয়াতি এবং অভিবাসীদের আচরণ নিয়ে অভিযোগ।

তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে ১২টি দেশ বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করেছে। অনেক দেশ উচ্চ হারে আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে এবং নতুন শর্ত আরোপ করেছে। ভিয়েতনাম, লাওস, মিশর, উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান সম্পূর্ণ ভিসা বন্ধ করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে মালয়েশিয়া পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কাতারসহ গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারগুলোতে ভিসা দেওয়া বন্ধ হয়েছে। নতুন নিয়ন্ত্রণ ও ভিসা শর্ত না মানায় মালয়েশিয়া বিমানবন্দর থেকে ১২৩ বাংলাদেশিসহ ১৯৮ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এসব ব্যক্তিদের প্রবেশে বাধা দিয়েছে এবং ‘নট টু ল্যান্ড’ নীতির আওতায় তাদের বহিষ্কার করা হবে।

একসময় পূর্ব ইউরোপের সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত রোমানিয়া ও ক্রোয়েশিয়াও এখন বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছে। থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াতেও ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বাংলাদেশিদের তিন শতাধিক ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ২০২৫ সালে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক আলোচনা চলছে এবং বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে দেশগুলো নিরাপত্তা ও নিয়মকানুনে কঠোর।

ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি নয়। মন্ত্রণালয়গুলো যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ায়, তাহলে দ্রুত সমাধান সম্ভব।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ভিসা আবেদনপত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান বড় সমস্যা এবং এটি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ঘর গোছাতে হবে’ অর্থাৎ নিজস্ব ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।

বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরামের তথ্য মতে, গত এক বছরে বহির্গামী পর্যটন ও কর্পোরেট ভ্রমণ ব্যাপক হারে কমেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও কঠোর ভিসা নীতিকেই এর মূল কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।

ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, গণতান্ত্রিক উন্নতি ছাড়া এই সমস্যা সমাধান কঠিন।

এদিকে, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের পর্যটন চাহিদা বেড়েছে, তবে বিমান টিকিটের মূল্যস্ফীতি ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

Scroll to Top