মাহরিন চৌধুরী ছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষিকা। তিনি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়ার মেয়ে। রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি দগ্ধ হন এবং পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন।
তার স্বামী মনসুর হেলাল জানান, সোমবার ভোরেই মাহরিনের মরদেহ ঢাকা থেকে তাদের পৈত্রিক ভিটায় নেওয়া হয়। তাকে সমাহিত করা হবে জলঢাকার বোগলাগাড়ী চৌধুরী পাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে।
তার মৃত্যু পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে এসেছে তার জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়। স্বজনদের ভাষ্যে, মাহরিন কখনো তার রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করতেন না। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতার সময় যখন অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে দূরে থাকতেন, তখন মাহরিন সাহসিকতার সঙ্গে হাসপাতালে বা কারাগারে খাবার পৌঁছে দিতেন।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তিনি ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষিকা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মামাতো ভাই এম আর চৌধুরীর কন্যা, অর্থাৎ জিয়ার আদরের ভাতিজি। জিয়ার মৃত্যুর পর তার ভাই মহিদুর রহমান এই চৌধুরী পরিবারকে আগলে রাখেন।
স্বজনদের মতে, মাহরিন ছিলেন প্রচারবিমুখ ও বিনয়ী মানুষ। তিনি মিডিয়ার সামনে আসা বা বাহবা পাওয়ার কোনো আগ্রহ দেখাননি। নিঃশব্দে ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করাই ছিল তার ধারা।
সোমবার, ২১ জুলাই, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে ভবনের ভেতরে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে ছুটে যান মাহরিন চৌধুরী। তিনি ২০ জন শিক্ষার্থীকে নিরাপদে বের করতে সক্ষম হলেও নিজে আর বের হতে পারেননি।
ঘটনাস্থলে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানেই লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় রাত সাড়ে সাতটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।



