গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সহিংসতার পর দেশের জনগণের উদ্দেশে অডিওবার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনগণকে ঘরে না বসে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। হাসিনা বলেন, “যা আছে, তা নিয়েই এখন পথে নামতে হবে। ঘরে বসে থাকার সময় আর নেই।”
ঘটনার সূত্রপাত হয় বুধবার, যখন সদ্য গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি গোপালগঞ্জে ‘জুলাই পদযাত্রা’র আয়োজন করে। পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। চলে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও গোলাগুলি। সরকারি সূত্রে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলেও শেখ হাসিনার ভাষ্যমতে প্রাণ গেছে অন্তত সাতজনের, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ১৫ জন।
অডিওবার্তায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, “গোপালগঞ্জে এনসিপি গণ্ডগোল করেছে। ১৫ জনের গুলি লেগেছে, সাতজন নিহত। কেউ কেউ বলছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমরা তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। এমন একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যা মেনে নেওয়া যায় না। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ ও হামলাকারীদের সংঘর্ষে বহু সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এনসিপির অভিযোগ, এই সহিংসতায় নেতৃত্ব দিয়েছে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যরা। পদযাত্রায় সরাসরি হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি এনসিপির।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। সদস্য হিসেবে রয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দুই সচিব। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দেবেন।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, গোয়েন্দা সূত্রে আগে থেকেই অশান্তির আশঙ্কা ছিল, তবে সহিংসতা এতো ব্যাপক হবে তা প্রশাসন অনুমান করতে পারেনি। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।



