ভারতে আশ্রিত আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য মমতার

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা—এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ বিষয়ে এবার মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) নিউ টাউনের একটি সরকারি কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য করেন তিনি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, “আমাদের অতিথি তো কয়েকজনকে রেখেছে ভারত সরকার। আমি কি না করেছি? কারণ, রাজনৈতিক কারণ আছে, ভারত সরকারেরও কারণ আছে। পাশের দেশ বিপদে পড়েছে। কই, আমরা তো কখনো বলি না।”

তিনি নাম উল্লেখ না করলেও স্পষ্ট ইঙ্গিত করেন শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ নেতাদের প্রতি। মমতার কথায়, “আপনারা কেন বলবেন, বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি হয়ে গেল?”

এ সময় তিনি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের প্রতি বৈষম্যের প্রসঙ্গ তোলেন। বিশেষ করে ওড়িশা ও আরও কিছু রাজ্যে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে হেনস্তার ঘটনায় উদ্বেগ জানান তিনি।

মমতা বলেন, “একটা বিজ্ঞপ্তি করে বলা হয়েছে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই ডিপোর্ট করে দাও! কেন? তারা জানে না, বাংলা ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা সারা এশিয়ায় দ্বিতীয়, আর বিশ্বে পঞ্চম।”

তিনি বলেন, “ভারতের যে কোনো নাগরিক দেশের যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন। কিন্তু বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলা হচ্ছে—এটা চলতে পারে না।”

শুধু বাংলাদেশি বলেই নয়, বাংলাভাষীদের ‘রোহিঙ্গা’ বলেও অপমান করার অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, “যাকেই পাচ্ছে, বাংলায় কথা বললেই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশি আর রোহিঙ্গা। এটা রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছু না।”

শেষে মমতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “রাজনীতি করতে হলে মন ঠিক রাখতে হবে। রাজনৈতিক লোকেরাই সরকার চালায়। যদি তারা রাজনৈতিকভাবে সঠিক না হন, তাহলে ভালো প্রশাসকও হতে পারবেন না। মাথা খোলা রাখতে হবে, মুক্ত চিন্তায়, মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে জানতে হবে।”

এই বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারতে আশ্রয় এবং এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে মমতার কৌশলী অবস্থান স্পষ্ট হয়। একইসঙ্গে, বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে চলমান বর্ণবাদী মানসিকতার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী সরব হন।

Scroll to Top