‘আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব’

“আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? বাবাকে যারা হত্যা করেছে, আমরা তাদের বিচার চাই”—এমন করুণ কণ্ঠে বিচার চাইলেন মিটফোর্ডে চাঁদাবাজদের হাতে নিহত ব্যবসায়ী সোহাগের ছোট মেয়ে সোহানা।

নিহত সোহাগের (৩৮) লাশ শুক্রবার সকালেই ঢাকা থেকে নিজ জেলা বরগুনায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। পরিবার, স্বজন এবং এলাকাবাসীর কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকার পরিবেশ।

পরিবার সূত্র জানায়, মাত্র সাত মাস বয়সে বজ্রপাতে বাবাকে হারানো সোহাগ বেড়ে উঠেছেন অসহায় এক পরিবেশে। তার মা আলেয়া বেগম সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। বড় হয়ে মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন সোহাগ।

তিনি স্ত্রী লাকি বেগম ও সন্তানদের নিয়ে কেরানীগঞ্জের মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন। জীবনের ঘাম-ঝরা শ্রমে গড়া সেই ছোট্ট ব্যবসা এক সময় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নজরে পড়ে।

পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় একটি চাঁদাবাজ চক্র তার কাছে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দিলে দোকানে তালা মেরে দেওয়া হতো।

ঘটনার দিন, গত বুধবার (৯ জুলাই), তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় ওই চক্র। এরপর চাঁদার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। সোহাগ তা দিতে অস্বীকার করলে তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয় এবং পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ।

নিহতের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, “আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে হুমকি-ধমকির মধ্যে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল। সন্ত্রাসীরা তার ব্যবসা সহ্য করতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত তারা তাকে মেরে ফেলল।”

সোহাগের বড় বোন ফাতেমা বেগম বলেন, “আমার ভাই চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দোকান রক্ষা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই সাহসের মূল্য তাকে জীবন দিয়ে দিতে হলো।”

সোহাগের পরিবারসহ এলাকাবাসী দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তরা এলাকার পরিচিত চাঁদাবাজ ও দখলবাজ চক্রের সদস্য।

Scroll to Top