আগাম জামিন পেলেন ৪২ ‘আ. লীগ’ নেতাকর্মী

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের চারটি রাজনৈতিক মামলায় ৪২ জনকে আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। তারা সকলেই আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত। এর মধ্যে রবিবার ৩৬ জন এবং সোমবার ৬ জনকে আগাম জামিন মঞ্জুর করা হয়।

সোমবার (১৭ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান এবং মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ তাদের ৬ সপ্তাহের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে এবং সিলেটের দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়।

সোমবার আগাম জামিন মঞ্জুর করা ব্যক্তিরা হলেন জকিগঞ্জের মানিকপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে সুলতান আহমেদ, একই উপজেলার কলাদাপানিয়া গ্রামের সুধীর কুমার সিংহের ছেলে সজল কুমার সিংহ, হাটধর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল আহমেদ, দরগা বাহারপুর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে এটিএম ফয়সাল এবং পিরের চক গ্রামের নোমান আলীর ছেলে শিমুল আহমেদ।

এর আগে, রবিবার একই আদালতের বিচারকরা ৩৬ জনকে ৮ সপ্তাহের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন শুনানিতে আসামিপক্ষের পক্ষে আইনজীবী শারমিন রুবায়াত ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

জামিনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন জকিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবুল খায়ের চৌধুরী, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব আহমেদ, জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম.এ.জি. বাবর, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সজল বর্মণ, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আল আমিন আবদুল্লাহ সুমন প্রমুখ।

হাইকোর্ট কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুরকৃতদের মধ্যে অন্যতম জকিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবুল খায়ের চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “আজ ৬ জনকে আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে, গতকাল (রবিবার) আরও ৩৬ জনকে আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন।”


৬ মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের সমঝোতা হয়েছিল আ.লীগ-বিএনপি-জামায়াতের

২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে এবার মুখ খুললেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, সেই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। তিনি ৩ মার্চ তার ফেসবুকে পোস্ট করা এক স্ট্যাটাসে এই কথাগুলো বলেন।

প্রাক্তন সেনাপ্রধান স্ট্যাটাসে লিখেছেন যে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আমার ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। কারণ, কিছু লোক তাদের অন্যায্য এবং অবাস্তব আকাঙ্ক্ষার কারণে সেনাপ্রধান হিসেবে আমার দায়িত্ব কী হওয়া উচিত ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল (২০০১-২০০৬), তখন তারা প্রধান বিচারপতির অবসরের বয়স বাড়িয়েছিল এবং তাদের পছন্দের একজন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করেছিল। ২০০৬ সালে, যখন তাদের পাঁচ বছরের শাসনকাল শেষ হয়, তখন সরকার পদত্যাগ করে।তবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে বিএনপির অভিলাষের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ ‘লগি-বৈঠার আন্দোলন’ নামে এক ভয়াবহ বিক্ষোভের সূচনা করে।

ফলে একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক হিসাবে যিনি সুপরিচিত ছিলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে আওয়ামী লীগ মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ, যিনি বয়োবৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ছিলেন। আওয়ামী লীগসহ তাদের অনুসারী দলগুলো ও জাতীয় পার্টি এই নিয়োগ মেনে নিলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দীন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন। তিনি তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উদ্দিন আহমেদের চাপে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হন এবং ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করেন।

এরপর, প্রায় দুই বছর বিলম্বের পর, ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া লিখেছেন যে, সংবিধানে নির্ধারিত তিন মাসের মেয়াদ লঙ্ঘন করে সেনাসমর্থিত ইয়াজউদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা শেষে ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সেই নির্বাচনের ফলাফলকে বিজয়ী দল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলে বর্ণনা করলেও বিএনপি এটিকে কারসাজিপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করে।

দেশবাসী দেখেছে যে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেছে। এবং পরবর্তীতে, ক্ষমতার আসনে বসে থাকা আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে।

এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে, বিএনপি ২০১৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে, যা আওয়ামী লীগকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দেয়। সেই নির্বাচনকে ঘিরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে।

প্রথমটি প্রকাশ্যে ছিল: আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টি আসন জিতেছিল।

দ্বিতীয়টি গোপন : কিছু পশ্চিমা দূতাবাসের চাপে, নির্বাচনের ছয় মাসের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা হয়। তবে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনাপক্ষ পরবর্তী সময়ে এই প্রতিশ্র“তি রক্ষা করেনি।

নির্বাচন পরিচালনা বা প্রতিরোধ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়নি। তারপরেও, বিএনপি সেনাপ্রধানকে দোষারোপ করে, তাকে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সাহায্য করার অভিযোগ করে। তবে, বিএনপি কখনই সেনাবাহিনী কীভাবে সাহায্য করেছিল তার কোনও স্পষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি।

একজন পেশাদার সেনা কর্মকর্তা হিসেবে, ২০০৭ সালে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ এবং তার সহযোগীরা যা করেছিলেন, আমি তেমন কিছু করতে রাজি ছিলাম না। আমার এবং আমার অধীনস্থ সেনা সদস্যদের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব হলো সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকা, যতক্ষণ পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকে। তাহলে আমি কোন ভিত্তিতে সেই শপথ ভঙ্গ করতাম?

এক্ষেত্রে আমি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক আলেকজান্ডার মিলির বক্তব্যের সঙ্গে একমত, ‘সেনাপ্রধানের আনুগত্য ব্যক্তিগতভাবে বেগম খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনার প্রতি নয়, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির প্রতিও নয়; বরং তাকে অনুগত থাকতে হবে দেশের সংবিধানের প্রতি, যেটি রক্ষার জন্য তিনি শপথ নিয়েছেন।’

যারা সংবিধানকে কাগজের স্তূপের সমতুল্য মনে করেন এবং যখনই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা অস্ত্রের জোরে এটি ফেলে দিতে বা পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, আমি তাদের দলে ছিলাম না। আমি সংবিধানকে জনগণ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে একটি পবিত্র চুক্তি হিসেবে দেখেছি।

যদি কোনও রাজনৈতিক দল স্বার্থপর কারণে এটি সংশোধন করে, তবে রাজনৈতিকভাবে এটি মোকাবেলা করা বিরোধী দলগুলির দায়িত্ব এবং কর্তব্য। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নয়। ক্ষমতার লোভ আমাকে দায়িত্ববোধ থেকে সরাতে পারেনি বলেই আমি সেনাপ্রধান হিসেবে আমার মেয়াদ সন্তুষ্টির সাথে সম্পন্ন করতে পেরেছি। আজ আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, সেই সময় আমার আর কোনও উপায় ছিল না।

আমি স্বস্তি পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, নির্বাচনকে ঘিরে যে বিতর্ক, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে রাখতে পেরেছি। আমি মনে করি, নির্বাচনের মতো অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর কখনোই জড়িত হওয়া উচিত নয়।

সংবিধান সংস্কারের জন্য যে জাতীয় কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা নিশ্চয় সশস্ত্র বাহিনীর মতামত নিয়েছেন। বিশেষ করে বিদেশি আগ্রাসন মোকাবিলা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা ও জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা কীভাবে নির্ধারিত হবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন।

জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে কীভাবে সরকারকে বিরত রাখা যাবে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। এমন ব্যবস্থা থাকা উচিত, যেন নির্বাচনের পর পরাজিত দল তাদের ব্যর্থতার দায় সেনাবাহিনীর ওপর চাপাতে না পারে।