রাজধানীর বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ লুটের ঘটনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ ইতোমধ্যে বাসার দারোয়ানকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে রামপুরা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ছয়-সাতজনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী।
পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে সাতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, এবং তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এ ঘটনার পর উত্তেজিত হয়ে ওঠে বনশ্রী এলাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, রবিবার রাতে বনশ্রীর ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে নিজ বাসার সামনেই জুয়েলারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের পথরোধ করে ছিনতাইকারীরা। তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ১৪০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। তিনটি মোটরসাইকেলে আসা সাতজন দুর্বৃত্ত এই হামলায় জড়িত ছিল।
একটি বাড়ির ওপর থেকে মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায়, ভুক্তভোগীর সঙ্গে তিনজন ব্যক্তি ধস্তাধস্তি করছে, আর তিনটি মোটরসাইকেলে আরও চারজন তাদের ঘিরে রেখেছে। হঠাৎ এক দুর্বৃত্ত গুলি চালায়, এতে আনোয়ার হোসেন আহত হন। পরে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। হামলার সময় ভুক্তভোগীর স্ত্রী ও সন্তান চিৎকার করলেও গেটে তালা থাকায় তারা কিছু করতে পারেননি।
রামপুরা থানার ওসি মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ জানান, মামলাটি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের বাসার দারোয়ানকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তবে তাকে আটক করা হয়নি। ওসি আরও জানান, সাধারণত ঐ বাসার গেট রাত ১১টায় বন্ধ হয়, কিন্তু ঘটনার দিন কেন সাড়ে ১০টায় গেট বন্ধ হয়েছিল, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আহত আনোয়ার হোসেন জানান, দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার পরপরই তিনটি মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা তাকে ঘিরে ফেলে। তিনি দারোয়ানকে গেট খুলতে বললেও সে তা করেনি। দুর্বৃত্তরা তার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করলে বাধা দেন, এতে তারা গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। তার দাবি, যদি গেট খোলা থাকত, তবে তিনি বাসায় ঢুকে যেতে পারতেন এবং ছিনতাইকারীরা কিছু নিতে পারত না।
বাসার দারোয়ান পিয়ারুল ইসলাম বলেন, “চিৎকার শুনে বের হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু গুলির শব্দ শুনে সবাই ভয় পেয়ে যাই। দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা রাস্তায় গিয়ে দেখি আনোয়ার হোসেন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন।”
এ ঘটনায় বনশ্রী এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে তারা নিরাপত্তার আশ্বাস পান, এরপর সড়ক ছেড়ে দেন।