১৫ বছর লুটপাট করেছে, এখন আমরা ১৫ বছর লুটপাট করবো: ফরহাদ মজহার

দ্রুত নির্বাচনের দাবির বিষয়ে মত প্রকাশ করে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, “যারা দেশকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে দিতে চায় না, তারাই বলছে—এখনই নির্বাচন চাই, এখনই সরকার চাই। আওয়ামী লীগ ১৫ বছর লুটপাট করেছে, এবার আমাদের ১৫ বছর লুটপাট করার সময়!”

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুরে আধ্যাত্মিক সাধক আবদুল কাদির শাহ (রহ.)-এর ৫৭তম স্মরণোৎসব ও লোকজ মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, “৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল একটি নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য, বাংলাদেশকে নতুন ভিত্তিতে গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু আমাদের সেই কাজটি করতে দেওয়া হয়নি। তরুণদের ৫ আগস্টের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার সুযোগও দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার পেছনে তাদের (যারা সংস্কার ছাড়া দ্রুত নির্বাচন চাইছে) ভূমিকা রয়েছে। একই সঙ্গে পরাজিত শক্তি আওয়ামী লীগও এই অস্থিরতার পেছনে সক্রিয় রয়েছে।”


যে শর্তে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত! ভারতীয় মিডিয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য

সন্ধ্যা সাতটা। ভারতের দিল্লির লদি স্টেটের একটি অভিজাত বাংলোর সামনে কঠোর নিরাপত্তা। এই বাংলোর ভেতরেই রয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারিয়ে ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এরপর থেকেই তার সময় যেন থমকে গেছে।

অন্যদিকে ঢাকায় ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যা যেন স্বস্তি দিচ্ছে না কূটনৈতিকদের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দিষ্ট কক্ষে আলো জ্বলছে। টেবিলের উপর খোলা পরে আছে ভারত সরকারের কাছে পাঠানো কূটনৈতিক নোট। যেখানে বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইছে। কিন্ত অনেকদিন পার হয়ে গেলেও দিল্লি থেকে কোন উত্তর আসেনি। দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। যার সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও বিচারিক দলিল সংযুক্ত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোঃ রফিকুল আলম জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ভারতকে অনুসন্ধানী দল পাঠিয়ে সমস্ত প্রক্রিয়া সহজ করা হবে। প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পদক্ষেপ নিয়েছি।

২০১৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তি ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয়। এই চুক্তির আওতায় দুই দেশ অপরাধীদের ফেরত পাঠানোর বাধ্যবাধকতায় রয়েছে। তবে শেখ হাসিনার মতো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল হতে পারে।

আইন বিশেষজ্ঞ ড. সঙ্গীতা ঠাকুরের মতে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে পর্যালোচনা করবে—শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো ভারতের আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় কিনা। এটিকে দ্বৈত অপরাধ নীতি বলা হয়। পাশাপাশি, রাজনৈতিক, সামরিক বা ধর্মীয় কারণে কাউকে ফেরত পাঠানো হবে কিনা সেটিও বিবেচনা করা হবে। পর্যালোচনা শেষে বিষয়টি ভারতের প্রত্যর্পণ আদালতে যাবে।

ড. ঠাকুর মনে করেন, যদি আদালত মনে করে যে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তবে তার প্রত্যর্পণ আটকে যেতে পারে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিষয়টি নজরে আনতে পারে এবং যুক্তি দিতে পারে যে, বাংলাদেশে ফেরানো হলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার হাতেও কিছু বিকল্প পথ খোলা রয়েছে। তিনি চাইলে ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারেন। যদি তিনি দাবি করেন যে, বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অন্যায্য বিচার হতে পারে, তাহলে ভারতে দীর্ঘমেয়াদী আশ্রয়ের সুযোগ পাবেন।

দ্য ডিপ্লোম্যাটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারতের জন্য এটি একটি কূটনৈতিক দোটানা:
১) যদি ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠায়, তবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে, কিন্তু এতে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠতে পারে।
২) আর যদি ভারত তাকে আশ্রয় দেয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হবে।

এদিকে, দিল্লির বাংলোর এক ছোট্ট কক্ষে বসে আছেন শেখ হাসিনা। চারপাশে খবরের কাগজ ছড়িয়ে আছে। টেলিভিশনের পর্দায় একের পর এক আন্তর্জাতিক সংবাদ ভেসে আসছে। কিন্তু তার চোখে উদ্বেগের ছাপ নেই, মুখে অদ্ভুত নির্লিপ্ততা। তিনি জানেন, ভারত তাকে সহজে ফেরত দেবে না। কারণ ভারত কখনোই চায় না বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাকুক। আর শেখ হাসিনা জানেন, এখান থেকেই তিনি তার রাজনৈতিক চাল চালিয়ে যাবেন—শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।