ক্ষমতায় থাকার খায়েশ থাকলে পদত্যাগ করে নির্বাচন করুন: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে বলেছেন, নতুন দল গঠন করছেন—এটা ভালো কথা। তক্ষমতায় থাকার খায়েশ থাকলে পদত্যাগ করে নির্বাচন করুন
। ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে দল গঠন করুন, নির্বাচন দিন। ক্ষমতায় থেকেই দল গঠনের চেষ্টা করলে জনগণ তা মেনে নেবে না।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসুন। ভয় দেখিয়ে আমাদের কিছু হবে না, কারণ জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সংস্কারের অজুহাত দিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করলে জনগণ তা মেনে নেবে না।

জাতীয় নির্বাচন দ্রুত আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে চান, কিন্তু এতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সুযোগ পেয়ে সহিংসতা বাড়াবে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে আগে স্থানীয় নির্বাচন দিন, তবে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হলে দেশে দ্রুত শান্তি ফিরবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, আমরা যদি বলতাম সবাই ভালো আছি, তাহলে ভালো লাগত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চাল, ডাল, তেল, লবণের দাম বাড়তে বাড়তে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারালেও দেশের মানুষ এখনো নিরাপদ নয়। তার শাসনামলে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, কয়েক হাজার নেতাকর্মী খুন ও সাত শতাধিক গুমের শিকার হয়েছেন। যশোর জেলাতেই ৮৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা আয়নাঘর তৈরি করে সেখানে নেতাকর্মীদের আটকে নির্যাতন, খুন ও গুম করিয়েছেন। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে তার পতন হয়েছে। এই বিপ্লবের লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, যা স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি।

রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে, যা নির্বাচিত সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে বিএনপির ৩১ দফার অনেক মিল রয়েছে। তবে সংস্কারের নামে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ নেই, কারণ এদেশে ওয়ান ইলেভেন সফল হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, আপনি দায়িত্ব নিয়ে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু এখন শুনছি, আপনারা আগে স্থানীয় নির্বাচন দিতে চান, যা জনগণ মানবে না।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আমাদের দল ভাঙার অনেক চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু কেউ সফল হয়নি।

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খুলনা অঞ্চলের বন্ধ হওয়া পাটকল চালু ও যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে।

নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত এ সমাবেশ ঘিরে দুপুর ১টা থেকেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। বিকেল ২টার মধ্যেই টাউন হল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনসভায় রূপ নেয়।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় সদস্য সাবিরা নাজমুল মুন্নী, আবুল হোসেন আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি, মিজানুর রহমান খান প্রমুখ।


১৩ বছর সহ্য করেছি, আর ১৩ মিনিটও অপেক্ষা নয়, কি চাইছেন জামায়াতে আমির

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা সবসময়ই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির পক্ষে কথা বলেছি, ভবিষ্যতেও বলব। তবে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি নিয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি আমরা জানতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা কখনো ভাবিনি যে আজহার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামতে হবে। কিন্তু এখন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, যতদিন তিনি মুক্ত না হবেন, আমাদের আন্দোলন থামবে না।

ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যের পর দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আমরা চাই সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে এবং অন্যান্য নেতাদের মতো এটিএম আজহারুল ইসলামকেও মুক্তি দেবে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে তার ১৩টি বছর কারাগারে কেটেছে, যা কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। এখন আর এক মুহূর্তও অপেক্ষার সময় নেই, তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে।

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আমরা ভদ্র, কিন্তু দুর্বল নই। কেউ যেন আমাদের ধৈর্য ও সংযমকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা না করেন। অতীতেই আমরা দেখিয়েছি, প্রয়োজনে কতটা দৃঢ় হতে পারি। আমাদের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়ার আগে নানা আপসের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা সেসব প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরাও সেই আদর্শের অনুসারী। তাই আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না।

দলীয় নিবন্ধন প্রসঙ্গে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের নিবন্ধন জালিম সরকার বাতিল করেছিল, আর সেটি ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি মানে অন্যায়কে টিকিয়ে রাখা। আমরা বাংলাদেশের মাটিতে কোনো বৈষম্য মেনে নেব না এবং আমাদের আন্দোলন চলবে যতক্ষণ না সব অন্যায়ের অবসান ঘটে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বিগত ১৫ বছর যেভাবে সাহসের সঙ্গে রাস্তায় ছিলেন, আগামী দিনেও কি এই লড়াই চালিয়ে যাবেন? উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমস্বরে “হ্যাঁ” বলে সাড়া দেন।

পরে তিনি স্লোগান দিয়ে বলেন, “শেষ হয়নি যুদ্ধ, চলবে ইনশাআল্লাহ।” একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করেন, “আমাদের চোখ রাঙিয়ে লাভ নেই, কারণ আমরা কারো ভয় করি না। কথা বলুন রাজনীতির ভাষায়, ফ্যাসিবাদের ভাষায় নয়।”

তিনি আরও বলেন, অতীতেও ষড়যন্ত্র ছিল, এখনো আছে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় সব ষড়যন্ত্র একে একে ব্যর্থ হয়েছে, আগামীতেও হবে। আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।

সমাবেশ শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।