বিএনপি-ছাত্রনেতাদের দূরত্বে আওয়ামী লীগের লাভ? যা বললেন আসিফ নজরুল!

বিএনপি ও ছাত্রনেতাদের বা গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানান।

আসিফ নজরুল লেখেন, “বিএনপি ও ছাত্রনেতাদের (বা গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো) মধ্যে দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কখনোই কাম্য নয়। এটি আওয়ামী লীগকে আরও উৎসাহিত ও বেপরোয়া করে তুলতে পারে, যার কিছু উদাহরণ আমরা সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে পেয়েছি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত দুই দিনে ফেসবুকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টাদের ও ছাত্রনেতাদের পালানোর গুজব ছড়ানো হয়েছে, যা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে উস্কে দিয়েছে। এসব গুজবের কারণে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

নিজের পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “আমার বিশ্বাস এবং যতোটুকু জানি:
ক) বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্র বা ১/১১-এর মতো কোনো ঘটনার পেছনে নেই।
খ) ছাত্রনেতারা সরকারে থাকা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করছেন না।
গ) জুলাই ঘোষণাপত্র হবে একটি ঐতিহাসিক দলিল, যেখানে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মতামত আন্তরিকভাবে প্রতিফলিত হবে।
ঘ) বৃহত্তর ঐক্যের জন্য বিএনপি ও ছাত্রনেতারা নির্বাচন-কেন্দ্রিক সমঝোতার ব্যাপারে আগ্রহী।”

আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের ঐক্যের বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের বিপুল অর্থ, শক্তিশালী প্রচারণা নেটওয়ার্ক, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু তা যেন শত্রুদের জন্য উৎসাহের কারণ না হয়।”

তিনি সবাইকে শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে স্মরণ রেখে দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।


শেখ রাসেলকেও কেন হ*ত্যা করতে হয়েছিল, কারণ জানালেন রাশেদ চৌধুরী

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল থেকে রেডিওতে ঘোষণা হচ্ছিল, “শেখ মুজিব ইজ ডেড।” কেন শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল, এমনকি শিশু শেখ রাসেলও এই হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পেল না—এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম রাশেদ চৌধুরী (বীর প্রতীক)। সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলের এক লাইভে প্রথমবারের মতো এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।

ইলিয়াস হোসেনের প্রশ্নের উত্তরে রাশেদ চৌধুরী জানান, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনীর তরুণ অফিসাররা হতাশ হয়ে পড়েন। দুর্ভিক্ষ, লুটপাট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে গোপনে আলাপ-আলোচনা চললেও সিনিয়র কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতেন না। ১৯৭৫ সালের বাকশাল গঠনের পর এই চিন্তা আরও গভীর হয়। তবে রাশেদ চৌধুরী স্পষ্ট করেন যে, তিনি সরাসরি এই পরিকল্পনার অংশ ছিলেন না, বরং আলোচনা পর্যায়েই ছিলেন।

১৫ আগস্টের অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন ফারুক, যেখানে রশিদের দায়িত্ব ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একত্রিত করা। অপারেশনটি শেখ মুজিবের ধানমন্ডির বাসা, শেখ ফজলুল হক মণির বাসা, সেরনিয়াবাদ হাউজ এবং রেডিও স্টেশনকে ঘিরে পরিচালিত হয়।

শেখ রাসেলের মৃত্যু সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাশেদ চৌধুরী উল্লেখ করেন, ধানমন্ডির বাসায় গোলাগুলির সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে রাসেলও দোতলায় আটকা ছিলেন। তিনি বলেন, গোলাগুলির একপর্যায়ে সিপাহীরা ক্ষিপ্ত হয়ে জানালা দিয়ে গ্রেনেড ছোড়ে। এতে পরিবারের সবাই প্রাণ হারান। রাসেলকে হত্যা করার নির্দেশনা কেন দেওয়া হয়েছিল—এই প্রশ্নে রাশেদ চৌধুরী সরাসরি উত্তর না দিলেও ইঙ্গিত দেন যে, পুরো ঘটনা পরিকল্পনার বাইরেই ঘটে।

লাইভে রাশেদ চৌধুরী দাবি করেন, মুজিবের শাসনকালে গণতন্ত্রের পরিবর্তে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনি মনে করেন, মুজিবের শাসনকালেই তার মৃত্যুর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

তিনি বলেন, “মুজিবকে হত্যা করা না হলে দেশ পরিবর্তন সম্ভব ছিল না।” তবে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি জানান, নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।

ইলিয়াস হোসেনের প্রশ্ন ছিল, মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে জীবিত রেখে দেওয়া কি ভুল ছিল? এই প্রশ্নে রাশেদ চৌধুরী সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তবে তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মুজিবের একনায়কতন্ত্রই তার মৃত্যু অনিবার্য করে তুলেছিল।

এভাবেই ইতিহাসের সেই কলঙ্কিত অধ্যায় সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম রাশেদ চৌধুরী।