দেশে যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চিড়েচ্যাপ্টা, তখনই সরকারের নতুন ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর বাড়তি ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে বিলাসপণ্য—সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় আরও চাপ সৃষ্টি করবে।
বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এই পরিবর্তন কার্যকর হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, বিভিন্ন পণ্যে নতুন করহার চালু হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে দাম বৃদ্ধি হতে পারে। যদিও এনবিআর দাবি করেছে, এই উদ্যোগ মূল্যস্ফীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না, তবে ব্যবসায়ী মহল ও অর্থনীতিবিদরা এ বিষয়ে একমত নন।
ফল, জুস, বেভারেজ, তামাকজাত পণ্য, রেস্তোরাঁর খাবার, মোবাইলের টকটাইম ও ইন্টারনেটসহ প্রায় ৯০টিরও বেশি পণ্য ও সেবার ওপর বাড়তি কর আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে, মিষ্টি, পোশাক, ওষুধ এবং এলপি গ্যাসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রেস্তোরাঁ খরচের ক্ষেত্রে, ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ১,০০০ টাকার খাবারের বিলের জন্য এখন ৫০ টাকার বদলে ১৫০ টাকা ভ্যাট দিতে হবে। একইভাবে মিষ্টির ওপর ভ্যাটও দ্বিগুণ করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রেও খরচ বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটে ভ্রমণের আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা এবং আন্তর্জাতিক রুটে শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা করা হয়েছে।
সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূরণ এবং আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২,০০০ কোটি টাকা কম সংগ্রহ হয়েছে। এই ঘাটতি পূরণের জন্যই মধ্যপথে এসে বাড়তি ভ্যাট ও শুল্কের মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, এর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হবে। রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি তাদের ভ্যাট বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করার মতো কর্মসূচি নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন শুল্ক-কর আরোপের ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে এমন সিদ্ধান্ত জীবনযাত্রার মানে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে তাদের আশঙ্কা।
নতুন ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সাধারণ ভোক্তাদের খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। রাজস্ব ঘাটতি পূরণে সরকার এই পদক্ষেপ নিলেও, এটি মানুষের জীবনযাত্রায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা।