সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুম, সুরঞ্জনকে যেভাবে পাঠানো হয়েছিল ভারতের কারাগারে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে পিরোজপুরের সুখরঞ্জন বালি অপহৃত হন এবং ভারতের কারাগারে বন্দি জীবন কাটান। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকায় ট্রাইব্যুনালের চত্বরে আইনজীবীদের সঙ্গে থাকাকালীন সাদা পোশাকের লোকেরা তাকে তুলে নেয়। এরপর চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয় এবং সাঈদীর বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়।

সুখরঞ্জনের ভাষ্যমতে, তাকে নির্যাতন করা হয়, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় এবং টাকার লোভ দেখানো হয়। রাজি না হওয়ায় বিজিবির সহায়তায় তাকে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিএসএফের নির্যাতনের পর তাকে পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট ও দমদম কারাগারে বন্দি রাখা হয়। পাঁচ বছর কারাদণ্ডের পর মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় ২০১৮ সালে দেশে ফিরতে সক্ষম হন।

সুখরঞ্জন জানান, তাকে বাংলাদেশে অপহরণের পর প্রথমে একটি অন্ধকার ঘরে রাখা হয়। পরে সেখানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। নির্যাতনের পাশাপাশি তাকে লোভ দেখানোর চেষ্টাও চলে।

পরে, তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় সীমান্তে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিএসএফ তাকে প্রচণ্ড মারধর করে এবং দমদম কারাগারে পাঠায়। সেখানে পাঁচ বছর বন্দি থাকার সময় তিনি মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার শিকার হন।

সুখরঞ্জন বলেন, অপহরণ এবং গুমের পেছনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিজিবির সরাসরি ভূমিকা ছিল। দেশে ফিরে তিনি এসব ঘটনার বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

সম্প্রতি গঠিত গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত ১,৬৭৬টি গুমের অভিযোগ জমা পড়ে। এতে অনেক ঘটনায় তৎকালীন সরকারের শীর্ষ নেতাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। সুখরঞ্জনের ঘটনা ওই প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

সাঈদীর বিচার ও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে দেশে বিতর্ক ছিল। সুখরঞ্জনের ভাষ্য এই বিচার প্রক্রিয়া ও গুমের ঘটনাকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে।

Scroll to Top