ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে অপরাধে অভিযুক্ত অনেক ব্যক্তিকে গুম করে দেওয়া হতো এবং এসব ঘটনায় ভারতের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এই অভিযোগ তুলে ধরেছে এবং এর সত্যতা নির্ধারণে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। পাঁচ সদস্যের এই কমিশন, যেটির নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, সম্প্রতি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের সময় ৩,৫০০-এর বেশি মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে বহু ঘটনায় সরাসরি ভারতের ভূমিকা ছিল। এমনকি কিছু বাংলাদেশি এখনো ভারতে বন্দি থাকতে পারেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশন সুপারিশ করেছে, বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বন্দিদের শনাক্ত করতে পদক্ষেপ নিক।
কমিশনের রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের চুক্তি থাকতে পারে। দুটি বিশেষ ঘটনার উল্লেখ করে এটি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে:
- সুখরঞ্জন বালি: যাকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে অপহরণ করে ভারতের একটি জেলে পাওয়া যায়।
- সালাউদ্দিন আহমেদ: বিএনপির এই নেতাকে ২০১৫ সালে ঢাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, পরবর্তীতে তাকে ভারতে পাওয়া যায়।
কমিশনের অনুসন্ধানে ঢাকা ও এর বাইরের আটটি গোপন বন্দিশালার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় ১,৬৭৬টি গুমের অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৭৫৮টির তদন্ত সম্পন্ন হলেও ২৭ শতাংশ মানুষ এখনো নিখোঁজ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসব গুমের ঘটনার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতো বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। হাসিনা সরকারের একাধিক মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার মতে, ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠতা প্রথম থেকেই ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ভালোভাবে নেয়নি। রিপোর্টে এই সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
এই “সত্য উদ্ঘাটন” শীর্ষক রিপোর্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং গুমের ঘটনার তদন্তে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।