বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে উত্তেজনার নতুন মোড় নিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের বিশদ বিবরণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে শান্তিপূর্ণ ছাত্রবিক্ষোভ ‘দেশব্যাপী আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এই আন্দোলনকে ‘বিশ্বের প্রথম জেন-জি বিপ্লব’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতির চাপে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন এবং বর্তমানে তিনি দিল্লিতে নির্বাসিত রয়েছেন।
পরবর্তী সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দায়িত্ব নেয়। তবে হাসিনার শাসনামল শেষে দেশটির ভেতরে এবং বাইরের নানা জটিলতা সামনে আসে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা এবং ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
অক্টোবর মাসে বাংলাদেশি হিন্দু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শীতল করেছে। তার সমর্থকদের দাবি, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলা নিয়ে সোচ্চার হওয়ার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি, বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় হামলার ঘটনা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সংকটময় করে তুলেছে। ওই হামলায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বাংলাদেশি জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং হাইকমিশন ভবনে ভাঙচুর চালায়।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দাবি করেছে, সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ অতিরঞ্জিত এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগ থেকেই বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী অসন্তোষ ধীরে ধীরে বাড়ছিল। ভারত এখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন কূটনৈতিক মেরুকরণ তৈরি করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।