তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের সিদ্ধান্তসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং গণভোটের বিধান পুনরায় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।
সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল এবং এটি সংবিধানের একটি মৌলিক ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। আদালত আরও বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছিল, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে পুরো সংশোধনী বাতিল করা হয়নি।
আদালত আরও উল্লেখ করেন, গণতন্ত্রই সংবিধানের মূল কাঠামো এবং সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই গণতন্ত্রের ভিত্তি। আদালতের মতে, জনগণের ক্ষমতায়নই সংবিধানের সৌন্দর্য, কারণ জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। রিট আবেদনকারী সুজনের পক্ষ থেকে সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া শুনানি করেন। বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল অংশ নেন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামের পক্ষে অ্যাডভোকেট শিশির মনির এবং ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান শুনানি করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল। পাশাপাশি, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের বৈধতা নিয়ে রুল জারি করেন। এর আগে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ কয়েকজন নাগরিক রিট আবেদন করেছিলেন। আজকের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হলো।