ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা সফর করেন। সফরে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সফর শেষে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিক্রম মিশ্রি ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বাংলাদেশ সফরের সারমর্ম তুলে ধরেন।
ব্রিফিংয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনার প্রতি ভারতের কোনো সমর্থন নেই। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোনো একক রাজনৈতিক দল বা সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
বিক্রম মিশ্রি স্পষ্ট করে বলেন, শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্য ব্যক্তিগত ডিভাইস ব্যবহার করছেন এবং ভারত তাকে এমন কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়নি যা ভারতের মাটি থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ করে দেয়। এটি ভারতের ঐতিহ্যগত রীতি অনুযায়ী, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্য ও যোগাযোগ অংশীদার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেল, বাস, এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথ উন্নয়নে উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করেছে। তবে যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা আপাতত বন্ধ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল, তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর এমন ঘটনায় জড়িত ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করায় ভারত এ উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তিনি এও উল্লেখ করেন যে, তার ঢাকা সফরের পর দুই দেশের সম্পর্কে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো কিছু ‘অপতথ্য’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। ব্রিফিংয়ে ইসকন নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুললেও বিক্রম মিশ্রি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, মন্দিরে হামলার ঘটনা নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
এছাড়া, তিনি জানান, গত বছর ভারত ১৬ লাখ ভিসা ইস্যু করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ‘ভালো প্রতিবেশী সম্পর্ক’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এটি পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার ওপর গড়ে উঠেছে।
বিক্রম মিশ্রির এই সফর এবং তার বক্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।