সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি ঘিরে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, এক যুবক হাতে হাতকড়াসহ মায়ের লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে জাহাঙ্গীর হোসেনের মা আলেয়া খাতুন (৭০) মারা যান। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি মায়ের জানাজায় অংশ নেন। তবে জানাজার সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খোলা হয়নি। এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
জাহাঙ্গীর হোসেন তার মায়ের মরদেহ কাঁধে করে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন এবং কবরস্থানে নিয়ে যান। তবে হাতকড়া খুলে দেওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় অনেকেই বিষয়টি অমানবিক বলে অভিহিত করেছেন। অনেকে মন্তব্য করেছেন, মায়ের শেষকৃত্যে হাতকড়াসহ উপস্থিত থাকা একজন মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
জাহাঙ্গীরের মামা আলাউদ্দিন বলেন, “আমার বোন আগে স্ট্রোক করেছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সম্ভবত স্ট্রোক করেই তিনি মারা গেছেন। তবে ভাগ্নে জানাজায় অংশ নিতে পেরেছে, এটাই আমাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির।”
জানা যায়, জাহাঙ্গীর গত ১২ নভেম্বর থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে আটক ছিলেন। ৫ আগস্ট সংঘর্ষের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মায়ের মৃত্যুর পর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে জানাজায় অংশ নিতে গেলেও তার হাতকড়া খোলার অনুমতি মেলেনি।
ছবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই হাতকড়া না খোলার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন। অনেকের মতে, এটি একটি অমানবিক এবং অন্যায় আচরণ। একজন ব্যক্তি তার মায়ের জানাজায় অংশ নিতে পেরেছেন, এটি প্রশংসনীয় হলেও হাতকড়াসহ উপস্থিত থাকার বিষয়টি তার প্রতি পুলিশের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, “পুলিশ লাইনের একটি টিম তাকে প্যারোলে বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রকৃত অর্থে কী হয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছি।”
যদিও পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলছে, তবে জানাজার সময় হাতকড়া না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদের মতে, এটি শুধুমাত্র অমানবিক নয়, বরং ধর্মীয় এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অনৈতিক।
একজন সন্তান তার মায়ের জানাজায় উপস্থিত থাকতে পেরেছেন, এটি একটি ইতিবাচক বিষয়। তবে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খোলা না হওয়া ঘটনাটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মানবিকতার অভাবের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে অনেকের কাছে বিবেচিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত থাকলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে।