বর্তমানে পাসপোর্টের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একটি বড় সংকট চলছে। এই সমস্যা বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের জন্য বিশেষ একটি চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরব, ইতালি, মালয়েশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোতে পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকার কারণে ভিসা নবায়নের কার্যক্রম বন্ধ এবং দেশে জরুরি কাজে ভ্রমণ করার বিষয়েও নানা ধরনের জটিলতায় পড়েছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একটি সুখবর দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
১১ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্টে এই সুখবর দেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রবাসীরা এমআরপি (Machine Readable Passport) পাসপোর্ট পেতে শুরু করবেন। এই ঘোষণাটি প্রবাসীদের মধ্যে অনেকের মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা জানি, আপনার পাসপোর্ট নিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমআরপি পাসপোর্টে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে আপনারা এমআরপি পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে সফল হবেন। যারা ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন, তারা তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে এমআরপি পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।”
এই প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল আরও বলেন, প্রথমে সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়াতে পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই দুটি দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা বেশি। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে যেখানে পাসপোর্টের জন্য চাহিদা বেশি, তাদের ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই অগ্রাধিকার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাসপোর্টের সমস্যাগুলো তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হবে।
আইন উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন যে, প্রচুর পরিমাণ এমআরপি পাসপোর্ট বর্তমানে ছাপানো হচ্ছে এবং আশা করা যাচ্ছে যে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এই সমস্যাগুলো আর দেখা যাবে না। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী একটি স্থিতিশীল ব্যবস্থা তৈরি হবে যা প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে আর কোনো অসুবিধার সৃষ্টি করবে না।
এই পরিস্থিতিতে তিনি অতীতের সমস্যাগুলোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। আসিফ নজরুল বলেন যে, এই সংকটটির উৎপত্তি একটি বিগত সরকারের আমলে। ওই সময়ের একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, তখনকার মন্ত্রী পাসপোর্ট প্রিন্টিংয়ের কাজটি নিজের পরিচিত একটি কোম্পানিকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই অনিয়মিত প্রক্রিয়ার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর সময়ক্ষেপণ হয় এবং পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করার পর দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে সময় লেগেছিল।
তিনি বলেন, “আপনারা অনেক কষ্টে আছেন। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ইনশাল্লাহ, আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে আপনারা পাসপোর্ট পেতে শুরু করবেন।”
এই সুখবর প্রবাসীদের মধ্যে একটি নতুন আশা এবং আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। এমআরপি পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে এ অগ্রগতি তাদের পাসপোর্ট নবায়নের জটিলতা এবং জরুরি কাজে দেশে ফিরতে সমস্যাগুলো সমাধানের পথে একটি বড় পদক্ষেপ। এই উদ্যোগে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রবাসীদের প্রতি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যে ভবিষ্যতে তারা আরও কার্যকর ও দ্রুত পাসপোর্ট প্রাপ্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
এটি একটি বড় বাস্তবিক পদক্ষেপ, যা প্রবাসীদের জীবনে প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা এবং পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে একটি নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া তৈরি করবে।
আশা করা যাচ্ছে যে এই উদ্যোগে প্রবাসীদের পাসপোর্টের জন্য সময়ের অপেক্ষার যে দুর্ভোগ ছিল তা কমে যাবে এবং তারা দ্রুতই তাদের প্রয়োজনীয় ভ্রমণ বা অন্যান্য কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় যে সরকারের এই উদ্যোগ প্রবাসীদের কল্যাণে অবিচল এবং তা আন্তর্জাতিক প্রবাসী কমিউনিটির জন্য একটি বড় সফলতা ও সমর্থনের বার্তা হিসেবে দেখা যাবে।