ভারতের উত্তর প্রদেশের ফতেহপুরে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে গেলো। এখানে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো একটি মসজিদের একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনাটি মূলত শহরের বান্দা-ফতেহপুর সড়কের ওপর নির্মিত মসজিদের কাঠামো পড়ে যাওয়ার কারণে ঘটেছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই কাজ সম্পন্ন করা হয়, যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এই বিষয়ের খবর প্রকাশ করেছে।
মসজিদটির নাম ‘নূরি জামে মসজিদ’, যা ১৮০ বছরের পুরানো। এটি ফতেহপুর শহরের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি একটি সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তবে গত কিছুদিন ধরে মসজিদের কাঠামোর উপর সড়কের ওপর চাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে নিরাপত্তার উদ্বেগ তৈরি হয়। এই পরিস্থিতির সমাধানে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছিলেন এই অবকাঠামো ভেঙে ফেলতে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, সড়কের উপর নির্মিত মসজিদের একটি অংশ পড়ে যাওয়ার পরে মসজিদ কমিটিকে এ বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসন প্রথমে আশা করেছিল যে কমিটি এটি নিজের দায়িত্বে সরিয়ে ফেলবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি তা করেনি। এই কারণে গণপূর্ত বিভাগকে (PWD) সামগ্রিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা হয়েছিল।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অবিনাশ ত্রিপাঠি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “মসজিদ কমিটি হাইকোর্টে একটি আবেদন জমা দিয়েছে। তবে আদালত এখনও এই বিষয়ে কোনও শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেনি। মঙ্গলবার যে কাঠামোটি ভেঙে ফেলা হয়েছে, তা মসজিদের বর্ধিত অংশ। মসজিদের মূল কাঠামো এখনও অক্ষত রয়েছে।’’
এই বিষয়টি গত আগস্ট মাসে একটি বড় বিষয় হয়ে ওঠে। তখন গণপূর্ত বিভাগ সড়কের ওপর নির্মিত সকল অবকাঠামো সরাতে মোট ১৩৯ জনকে নোটিশ দিয়েছিল। এই তালিকায় দোকানদার, বাড়ির মালিক এবং মসজিদ কমিটির সদস্যদের নামও ছিল। তাদের মধ্যে অধিকাংশ ইতিমধ্যে সড়কের ওপর নির্মিত কাঠামো সরিয়ে ফেলেছিল। মসজিদ কমিটিও তাদের আশ্বাস দিয়েছিল যে তারা কাঠামো সরাবে, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এই পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। অনেক স্থানীয় বাসিন্দা এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট এবং মনে করেন যে এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার প্রতি অবজ্ঞাসূচক আচরণ। পাশাপাশি, স্থানীয় কমিউনিটি গ্রুপ এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলোও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য রেখেছে। তাদের মতে, এই সংস্কার কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে, যা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে লক্ষ্য রাখে।
এদিকে, এই ঘটনাটি জেলা প্রশাসন এবং সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। উত্তর প্রদেশ সরকারের উচিত এই বিষয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা এবং স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটি প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি নির্ভরযোগ্য সমঝোতা স্থাপন করা। যাতে ঐতিহাসিক স্থাপনার ক্ষতি না হয় এবং স্থানীয় জনগণ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারে।
মেডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, কমিটি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগে কোনো মন্তব্য করেনি। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের উচিত মসজিদ কমিটির সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে একটি যৌথ পরিকল্পনা তৈরি করা। পাশাপাশি, বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই বিতর্কিত ইস্যুকে একটি সমঝোতা এবং স্থায়ী সমাধানে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
অর্থাৎ, এই ঘটনাটি ভারতের উত্তর প্রদেশে ঐতিহাসিক স্থানগুলোর সংরক্ষণ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের মধ্যে সম্পর্কের প্রকৃত চিত্র উন্মোচিত করেছে। জেলা প্রশাসন এবং কমিউনিটি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতা ও যোগাযোগ এই পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।