৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটে, আর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে পালান। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের কয়েক মাস পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব ও বিভাজনের লক্ষণ দেখা গেলেও, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিয়ে এক অভূতপূর্ব চমক দেখিয়েছে।
ড. ইউনূস জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে দেশের স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছেন। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যের আলোচনায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়। এই আলোচনায় ডান-বাম, ধর্মীয়, এবং উদারপন্থী সব দল উপস্থিত ছিল। এতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কমিউনিস্ট পার্টি, গণ সংহতি আন্দোলনসহ ২০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।
বৈঠকে জাতির স্বার্থে দল-মত নির্বিশেষে একত্রিত হয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও এই ঐক্যের আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আরেকটি সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে ছাত্র রাজনীতির নেতারাও একটি বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি নির্মূলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের শক্ত বার্তাও দেওয়া হয়েছে। এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হলে তার প্রভাব ভারতসহ পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। এই বার্তা ভারতের শাসকগোষ্ঠী সহজভাবে নেয়নি। তবে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ড. ইউনূস প্রমাণ করেছেন, ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জাতির দৃঢ় সংকল্পের ঘাটতি নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে শোষিত জাতি আজ ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীন থাকা এই জাতিকে কোনো অপশক্তি আর পরাজিত করতে পারবে না।
নেটিজেনরা এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রশংসা করছেন। একজন মন্তব্য করেছেন, “জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিবাদ ও বিদেশি প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।”
জাতীয় ঐক্যের এই অগ্রযাত্রা দেশের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে মনে করছেন সবাই।