Wednesday , December 11 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বৃটেন নিয়ে অস্বস্তি, লন্ডনে বক্তৃতা করবেন হাসিনা

বৃটেন নিয়ে অস্বস্তি, লন্ডনে বক্তৃতা করবেন হাসিনা

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যেই এবার বৃটেন নিয়ে নতুন করে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি বৃটিশ পার্লামেন্টের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এতে বেশ কিছু অসত্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বৃটেন নিয়ে অস্বস্তির আরেকটি কারণ সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের তৎপরতা। লন্ডনে বড় একটি সমাবেশের আয়োজন করছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, যা আগামী ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে পারে। তারা শেখ হাসিনাকে “প্রধানমন্ত্রী” হিসেবে দাবি করে এই সমাবেশের পোস্টার প্রকাশ করেছে। পোস্টারে শেখ হাসিনার প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জানা যায়, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান, যেখানে তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রিট করা হচ্ছে।

সমাবেশে শেখ হাসিনাকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত করার পরিকল্পনা চলছে। তবে এটি আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আয়োজকরা এই সমাবেশ থেকে প্রবাসী সরকার গঠনের সম্ভাবনারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। সমাবেশের ভেন্যু হিসেবে ইস্ট লন্ডনের ইম্প্রেশন হল নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকায় বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুককে ডেকে এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বুধবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তার সঙ্গে বৈঠক করেন। কূটনৈতিক রীতি অনুযায়ী, সাধারণত রাষ্ট্রদূতদের অতিরিক্ত সচিব বা মহাপরিচালক পর্যায়ে তলব করা হয়। তবে বৃটেনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের গুরুত্ব বিবেচনায় উপদেষ্টা সরাসরি আলোচনা করেছেন।

বৈঠকের পর উপদেষ্টা হোসেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি আগেই জানিয়ে দেন যে কোনো প্রশ্ন নেবেন না এবং শুধু স্টেটমেন্ট দেবেন। তাই বৃটিশ সমাবেশ নিয়ে সরাসরি কী আলোচনা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

লন্ডনের এই সমাবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। এটি কি আদৌ হবে, এবং শেখ হাসিনা সেখানে বক্তৃতা দেবেন কিনা, তা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

বৃটেন বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বললেন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বুধবারের সংবাদ ব্রিফিংয়ে কথা শুরু করেন এভাবে- ‘বৃটিশ হাইকমিশনারকে আমি ডেকেছিলাম দুটো কারণে, ছোটো ছোটো দুটো ঘটনা ঘটেছে। একটা হচ্ছে, ২ তারিখে বৃটিশ পার্লামেন্টে কয়েকজন এমপি বক্তব্য দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতির ওপরে এবং সেখানে কিছু মিস-ইনফরমেশন আছে, এটা আমি হাইকমিশনারকে জানিয়েছি এবং বলেছি যে, চারিদিকে যে তথ্যের প্রবাহ চলছে, সেটা থেকে মনে হয় যেন তারা তা নিয়েছেন। আর দুয়েকটা সংগঠন যারা কথাবার্তা বলেছেন, সেগুলো মোটামুটি বৃটেন-বেইজড। এখানে যেটা পরিস্থিতি সেটার প্রতিফলন বৃটিশ পার্লামেন্টে ঘটেনি।’

উপদেষ্টা বলেন, আমি যেটা বলেছি, পার্লামেন্ট মেম্বাররা তো যা ইচ্ছা তা বলবেন। এটাতে কারও-ই কিছু করার নাই, আমাদেরও কিছু করার নেই। কিন্তু আমাদের অবস্থানটা তারা যেন তাদের চ্যানেলে তুলে ধরেন। উনিও (বৃটিশ হাইকমিশনার) বলেছেন, আপনারা আপনাদের মিশনের মাধ্যমে জানান, আমরাও জানাবো। অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের একটা বিবৃতি এসেছে বেশ বড়সড়। সেখানে খুব দুঃখজনকভাবে যেটা এসেছে, আমি বলেছিও তাকে যে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি। সেখানে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, ৫ই আগস্টের পরে বেশি মৃত্যু হয়েছে। এ জিনিসটি পুরোপুরি মিথ্যা। ৫ই আগস্টের আগে নিহতের সংখ্যা দেখানো হয়েছে মোট ২৮০ জন! আমি বলেছি, বিষয়টা মোটেও তা না। ৫ই আগস্ট বা তার আগে অন্তত দেড় হাজার ছেলেমেয়ে মারা গেছেন। তার মধ্যে ৭৮০ জনের তো আমরা একেবারে বাই নেইম পরিচয় জানি। বাকি অনেকের পরিচিয় নিশ্চিত করা যায়নি। তবে ডেডবডি পাওয়া গেছে এবং তারা নিহত এতে কোনো সন্দেহ নেই।

উপদেষ্টা বলেন, ৫ই আগস্টের পর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রিপোর্টটা যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটা একেবারেই সঠিক নয়, বরং দুঃখজনক যে, এখানে জুলাই-আগস্ট জুড়ে এত বড় বড় ঘটনা ঘটেছে, সেটার কোনো উল্লেখ নেই তাদের রিপোর্টে। এটাও উল্লেখ নেই যে, এখানে বিপুলসংখ্যক ছাত্রকে রাস্তাঘাটে গুলি করে মারা হয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি বলেছি, তারা তাদের কথা বলছেন কিন্তু আমাদের তো সত্যটা এবং বাস্তবতাটা জানাতে হবে। আমাদের অবস্থানটা ব্যাখ্যা করার সুযোগ থাকতে হবে। বৃটিশ দূতকে বলেছি, আপনি একটু ব্যাখ্যা করুন আপনার সরকারের কাছে এবং আপনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। এটাই।’

লন্ডন সমাবেশের আয়োজক আওয়ামী লীগের নেতা যা বললেন: লন্ডন সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে আয়োজক যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, আমরা আশা করছি শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন। তার সঙ্গে তাদের সরাসরি কথা হয়েছে কিনা? অর্থাৎ কীভাবে আমন্ত্রণ জানানো হলো? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিভিন্ন মারফতে যোগাযোগ হয়েছে। ওই সমাবেশের জন্য বৃটিশ গভর্মেন্টের অনুমতি নিয়েছেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলরুমে অনুষ্ঠানের অনুমতি লাগে না। কেবলমাত্র ১০ ডাউনিং স্ট্রিট এবং পার্লামেন্টের সামনে অনুষ্ঠান করতে অনুমতি লাগে।

বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে শেখ হাসিনাকে তারা এখানো কীভাবে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলে যে প্রচার চালাচ্ছেন? সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যমান সংবিধানে তো অন্তর্বর্তী সরকার বলে কিছু নেই। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেয়া পর্যন্ত তারা এমনটাই বলতে চান বলে জানান ওই নেতা।

About Nasimul Islam

Check Also

১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু, প্রবাসীদের বড় ‘সুখবর’ দিলেন আসিফ নজরুল

বর্তমানে পাসপোর্টের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একটি বড় সংকট চলছে। এই সমস্যা বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *