২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে র্যাবকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার অভিযোগ উঠতে থাকে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১,৯২৬ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, যা ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
সরকারের নির্দেশে ২০১৩ সালের পর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দমন করতে র্যাবের ভূমিকা আরও জোরালো হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভ্যন্তরে ক্রসফায়ার নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিলে, নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তা এবং সদস্যদের নিয়ে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। এই টিমটি অলিখিত হলেও তাদের দক্ষতা এবং ভূমিকা সুস্পষ্ট ছিল। কোনো এলাকায় ক্রসফায়ারের প্রয়োজন হলে এই দলটির সদস্যদেরই দায়িত্ব দেওয়া হতো।
কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই টিমের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ক্রসফায়ারের পর সাধারণত একটি নির্ধারিত গল্প তৈরি করা হতো—‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধ’। এসব অভিযানে অংশ নেওয়া অনেকেই বিপিএম এবং পিপিএম পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
এছাড়া ক্রসফায়ারের পাশাপাশি গুমের অভিযোগও রয়েছে। গুম কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জমা পড়া ১,৬০০ অভিযোগের মধ্যে ৩৮৩টি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭২টি অভিযোগ র্যাবের বিরুদ্ধে। ডিবি, সিটিটিসি, ডিজিএফআই এবং পুলিশের বিরুদ্ধেও গুমের অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত কিছু কর্মকর্তার নাম সামনে এসেছে, যেমন র্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান এবং পুলিশ সদস্য মহিউদ্দিন ফারুকী।
এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও তীব্র সমালোচনা হয়েছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেছেন, “ক্রসফায়ার কখনো কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। অপরাধীদের বিচার আদালতেই হওয়া উচিত।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, পুলিশের হাত এখন অনেক বেশি শক্ত এবং তারা গুলি চালাতে দ্বিধা করছে না। এর পেছনে গত দুই দশকের অভ্যাস কাজ করছে।
আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে ১,৯২৬ জন এবং পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে ১,১০১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি ২০৬ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, খুলনা এবং যশোরে এই সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
সার্বিকভাবে, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুমের ঘটনা দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে।