রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাফি (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তার পেটে গুলি ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। নাফির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে কে বা কারা তাকে গুলি করেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) যাত্রাবাড়ী এলাকায় দিনভর সংঘর্ষে জড়ায় মোল্লা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, এবং কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষে বহু শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে অন্তত ৪৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়।
নাফি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হলো? কারা তা সরবরাহ করল? পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো গুলি চালায়নি। পুলিশের ধারণা, বহিরাগত কোনো অপরাধী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে গুলি চালিয়ে থাকতে পারে।
নাফির বড় ভাই নিলয় জানান, “আমার ভাই মারামারি দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সে যখন গুলিবিদ্ধ হয়, সেখানে কোনো পুলিশ ছিল না। ধারণা করছি, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা গুলি করেছে, কারণ তাদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে।”
সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় গতকাল (রোববার) ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচি থেকে। মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ ঢাকার প্রায় ৩০টি কলেজের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে তারা হাসপাতালে এবং পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর চালায়।
এর প্রতিক্রিয়ায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেয়। সোমবার সকালে তারা মোল্লা কলেজে হামলা চালায়, যা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। একাধিক দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
সংঘর্ষের সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পুলিশের কোনো সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। তারা টিয়ারগ্যাস বা রাবার বুলেটও ছোড়েনি। পুলিশের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই কেউ গুলি চালিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাফির খালু মোহাম্মদ সাঈদ জানান, “মারামারির খবর শুনে বাসা থেকে বের হয় নাফি। কিছুক্ষণ পরই গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখন তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, “পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি। বহিরাগত অপরাধীদের হাতেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছি।”
নাফি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সংঘর্ষের এই ঘটনা এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে।